নতুন পাসপোর্ট করতে হলে যা জানা দরকার

বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য সরকার তিন ধরনের বাংলাদেশ পাসপোর্ট ইস্যু করে থাকেঃ-

  • আন্তর্জাতিক সাধারণ পাসপোর্ট (সবুজ মলাট)
  • সরকারী পাসপোর্ট (নীল মলাট)
  • কূটনৈতিক পাসপোর্ট (লাল মলাট)

বাংলাদেশ পাসপোর্ট তৈরি নিয়ে অনেকের মনে অনেক ধরনের কনফিউশন বা দ্বিধা এমন কি ভীতিও আছে। এটা থাকা মোটেও কোন দোষের কিছু না। যে কাজ আপনি কখনো করেননি সেটা নিয়ে ভীতি থাকতেই পারে। তাছাড়া বাংলাদেশের সরকারী পাসপোর্ট অফিসগুলোর যে অবস্থা তাতে এটা মোটেই অস্বাভাবিক না। সরকারী ওয়েবসাইট বা বিভিন্নও ব্লগ গুলোতে যতটা সহজ ভাবে বাংলাদেশ পাসপোর্ট তৈরির ব্যাপারে লেখা হয়ে থাকে, বাস্তব অবস্থা অনেক ক্ষেত্রেই মোটেই তেমন না।

হয়তো ঢাকা চট্টগ্রাম বা সিলেটের মত প্রধান জেলাগুলোতে এখন বেশ ভাল ব্যাবস্থা করা হয়েছে। সেখানে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে অনেকেই গ্রাহকদের সেবা দিতে আপ্রান চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু দেশের অন্যান্য আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসগুলোর বেশিরভাগের অবস্থা পুরোপুরি ভাবে ভিন্ন। সেখানে এখনো আগের মতই অনিয়ম চলে এবং কিছু কিছু জায়গায় আপনাকেও অনিয়মের আশ্রয় নিতে হবেই যদি সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে চান। অন্যথায় অহেতুক ঝামেলাতে পড়ে যাবেন এবং সময় মত পাসপোর্টও পাবেন না।

তবে প্রিয় পাঠক, ভয় পাবার কোন কারন নাই। যত সমস্যা, তত সমাধান। অতি সম্প্রতি আমি আমার পাসপোর্ট করেছি এবং সেখানে যেসব সমস্যার সম্মুখিন হয়েছি, এবং সেগুলো থেকে কিভাবে পরিত্রান পেয়েছি সেগুলো শেয়ার করতেই আজকের এই ব্লগটা লেখা।

বাংলাদেশ পাসপোর্ট
বাংলাদেশ মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (MRP)।

নতুন বাংলাদেশ পাসপোর্ট কিভাবে করবেনঃ

যারা একেবারেই নতুন পাসপোর্ট করতে চান তাদের প্রক্রিয়া পুরাতন পাসপোর্টধারিদের চাইতে আলাদা। তাদেকে একদম প্রথম থেকে সব শুরু করতে হয়। আমি নীচে ধাপে ধাপে আপনার করনীয় গুলো লিখে দিচ্ছি। এই ধাপ গুলো যদি ক্রম অনুসারে অনুসরণ করেন তাহলে সবচাইতে কম সময়ে এবং কম ঝামেলায় পাসপোর্ট করতে পারবেন।

উল্লেখ্য এই যে অনলাইন এবং অফ লাইন দুই ভাবেই পাসপোর্ট ফর্ম পূরণ করতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে তেমন একটা পার্থক্য নেই। অনলাইনে পূরণ করলে যে বেশী সুবিধা পাওয়া যাবে এই ধারণা পুরোই ভুল। তাই আপনার যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে আপনি ফর্ম পূরণ করতে পারেন। আমি আজকে অফ লাইনে পাসপোর্ট করার প্রক্রিয়া নিয়ে কথা বলবো কারন আমাদের দেশের বেশিরভাগ বাংলাদেশী পাসপোর্ট এখনো অফলাইনেই করা হয়ে থাকে।

নতুন বাংলাদেশ পাসপোর্ট করতে যা যা লাগবে

বাংলাদেশ পাসপোর্ট
বাংলাদেশ পাসপোর্ট তৈরিতে যা যা লাগবে

ধাপ – ১ বাংলাদেশ পাসপোর্ট ফি জমা দেয়া

প্রথম ধাপটিই হল টাকা জমা দেয়া। এটার মাধমেই আপনার পাসপোর্ট তৈরি প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। রাষ্ট্রীয় ব্যাংক সোনালি ব্যাংক ছাড়াও এই ৫ টি ব্যাংকে টাকা জমা দেয়া যাবে।

  • ব্যাংক এশিয়া
  • ট্রাস্ট ব্যাংক
  • প্রিমিয়ার ব্যাংক
  • ঢাকা ব্যাংক
  • ওয়ান ব্যাংক

উল্লেখ্য এই যে আপনি যে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস থেকে পাসপোর্ট করাবেন, সেই এলাকার ব্যাংকের শাখাগুলোতে টাকা জমা দেয়াটা ভাল হবে। ব্যাংকে গিয়ে যেকোন কাউন্টারে বলতে হবে যে আপনি পাসপোর্ট ফি জমা দিতে চান। তাহলেই তারা আপনাকে পাসপোর্ট ফি প্রদানের বিশেষ স্লিপ দিয়ে সাহায্য করবে। সাথে জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে যাবেন, অনেক সময় অনেক অফিসার সেটা দেখতে চাইতে পারেন। সোনালি ব্যাংক এ ভিড় বেশী হয় স্বাভাবিক ভাবেই। তাই যদি আপনার পাসপোর্ট অঞ্চলে উল্লেখিত ব্যাংকগুলোর কোন শাখা থাকে তাহলে ভিড় এড়াতে পারবেন। তবে সব পাসপোর্ট অঞ্চলে সেইসব ব্যাংক এর শাখা নাও থাকতে পারে। কিন্তু সোনালি ব্যাংক আপনি পাবেন অবশ্যই।

আপনার যদি তাড়া না থাকে তাহলে সাধারন পাসপোর্ট করতে দিতে পারেন। সাধারণ পাসপোর্ট পেতে ২১ দিন সময় লাগে। এক্ষেত্রে ২১ দিনের কথা বলা হলেও আসলে অনেক ক্ষেত্রেই দেরি হয়। তাই দেড় মাস সময় লাগবে এটা ধরে নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

যদি আপনার জরুরী দরকার হয় তাহলে জরুরী ফি দিয়ে আর্জেন্ট পাসপোর্ট করাতে পারবেন। ৭ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট পাবার কথা। তবে এখানেও ৭ দিনের কথা বলা হয়ে থাকলেও কমপক্ষে ১৫ দিন সময় লাগতে পারে এটা ধরে রাখবেন।

  • পাসপোর্ট ফি সাধারণের ক্ষেত্রে ৩০০০ টাকা + ৪৫০ টাকা ভ্যাট = মোট ৩৪৫০ টাকা।
  • পাসপোর্ট ফি জরুরী ক্ষেত্রে ৬০০০ টাকা + ভ্যাট ৯০০ টাকা = মোট ৬৯০০ টাকা।

সাধারণ বা জরুরী পাসপোর্ট তৈরিতে এর বেশী কোথাও কোন খরচ নেই। পাসপোর্ট ফি প্রদানের রশিদটি যত্ন সহকারে সংরক্ষন করবেন। কারন এটা হারিয়ে ফেললে আপনাকে আবার টাকা জমা দিয়ে রশিদ নিতে হবে।

ধাপ – ২ পাসপোর্ট ফর্ম ডাউনলোড

এর পর http://www.passport.gov.bd/ এই ঠিকানায় গিয়ে বাংলাদেশ পাসপোর্ট ফর্ম ডাউনলোড করবেন। ওয়েবসাইটে যাবার পর দেখবেন Download Form নামে একটি বাটন আছে। এর উপর মাউস (কারসার) রাখলে দেখবেন একটি ড্রপ ডাউন মেনু আসবে। সেখানে ডি আই পি ফর্ম -১ এবং ডি আই পি ফর্ম -২ নামে ২ টি ফর্ম পাবেন। ক্লিক করে আপনি শুধু ডি আই পি ফর্ম -১ নামের বাংলাদেশী পাসপোর্ট ফর্ম ডাউনলোড করবেন। নীচের স্ক্রিনশট দেয়া হল।

বাংলাদেশ পাসপোর্ট
ছবিতে বাংলাদেশ পাসপোর্ট ফর্ম ডি আই পি -১ ডাউনলোড। ছবিঃ সরকারি পাসপোর্ট ওয়েবসাইট

আপনাদের সুবিধার্থে ফরমটিও দেখান হল, ইচ্ছা করলে এখান থেকেও ডাউনলোড করে নিতে পারেন। নীচের DOWNLOAD PASSPORT FORM এ ক্লিক করে ফর্মটি ওপেন করুন। এরপর রাইট মাউস ক্লিক করে সেভ অ্যাজ এ ক্লিক করে পিডিএফ /Adobe Acrobat Document ফরম্যাটে ফাইলটি সেইভ করুন। অথবা ফর্মের নীচের ডাউনলোড আইকন এ ক্লিক করলেও হবে। এর পর প্রিন্ট দিন। রঙিন অথবা সাদা কালো, যেভাবে ইচ্ছা প্রিন্ট করতে পারবেন কোন সমস্যা নাই। ফর্মের ফটোকপিও গ্রহণযোগ্য। একবারে অনেক গুলো কপি করে নিবেন।

“Edward Mordrake” এক মানুষ কিন্তু দুই মাথা

“Edward Mordrake এক মানুষ কিন্তু দুই মাথা “

360 ডিগ্রী কোণে মাথা ঘুরে যাওয়ার ব্যাপারটা হয়তো অনেকেই আপনারা হরর মুভিগুলোতে দেখে থাকবেন। প্যারানরমাল এক্সপার্টদের মতে,একটা মানুষের উপর যখন এভিল স্পিরিট বা জ্বীন ভর করে তখনই এই ব্যাপারটা ঘটে থাকে। আই মিন, ডেমনিক পোজেশন!
কিন্তু,কি হতো,যদি আমরা সামনে-পিছনে উভয়দিকেই দুটো মুখ নিয়ে জন্মাতাম? আর দুটো মুখই যদি কথা বলতে পারতো?
হয়তো দেখা গেল আপনি এক মুখে মিথ্যা বললেন,কিন্তু আপনার আরেকটা মুখ আবার সত্যিটা বলে দিলো! নিশ্চয়ই সুখকর না ব্যাপারটা মোটেও!
হয়তো আপনার কাছে এই ব্যাপারটা বিদঘুটে মনে হতে পারে,কিন্তু এমন অদ্ভুদ ধরনের মানুষ হিসেবেই অনেককে জন্ম নিতে দেখা গেছে পৃথিবীর ইতিহাসে। তবে,সামনে-পিছনে উভয়দিকেই মাথা নিয়ে জন্মানোর ব্যাপারটা খুবই রেয়ার বলা যেতে পারে।

এই রেয়ার জেনেটিক ডিসঅর্ডারটার মেডিকেল টার্মে যাওয়ার আগে এই ডিসঅর্ডার নিয়েই জন্মানো এডওয়ার্ড মডরেককে নিয়ে কিছু বলা যাক।


এডওয়ার্ড মর্ড্রেকের জন্ম হয় মূলত উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি কোনো একটা সময়ে,অভিজাত এক ব্রিটিশ পরিবারের উত্তরাধিকারী হিসবে। আঠারো শতকের দিকে ইংল্যান্ডে বেশ কিছু অভিজাত পদবি ছিলো এই যেমন ডিউক,আর্ল,ব্যারন ইত্যাদি। এখানে কথা হচ্ছে,শুধুমাত্র কিছু নির্দিষ্ট অভিজাত ব্রিটিশ পরিবারই এসব পদবির উত্তরাধিকারী হতো। তো,সেসময় শুধু ব্রিটিশ রয়্যাল ফ্যামিলিই তাদের উত্তরাধিকারী নির্বাচন করতে পারতো এবং এই উত্তরাধিকারীর হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়াটা “হাউস অব লর্ডস”-এ খুব জাঁকজমকপূর্ণ ভাবেই পালন করা হতো। তো,এডওয়ার্ডও সেরকমই এক পরিবারে জন্ম নেয় এবং সবরকম সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে থাকে। এই ব্যাপারটা অনেকটা এমন যে,জন্মের সময়ই আপনি লটারি জিতে নিলেন! কিন্তু,এডওয়ার্ডের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ঠিক সেরকম ছিল না।

এডওয়ার্ডের কন্ডিশনের ব্যাপারে সবচাইতে ভালোভাবে উল্লেখ এসেছে ডক্টর জর্জ গোল্ডের লেখা “এনোমেলিস এন্ড কিউরিয়োসিটিস অফ মেডিসিন(১৯০০)” বইটাতে….এই বইটাতে এডওয়ার্ডের এই জেনেটিক ডিসঅর্ডারের ভয়ংকর সব ব্যাপার তুলে ধরেন ডক্টর গোল্ড।

দুর্ভাগ্যক্রমে এডওয়ার্ডকে পরীক্ষা করার সুযোগ হয়েছিলো ডক্টর গোল্ডের। এবং,এডওয়ার্ড তার কন্ডিশনের ব্যাপারগুলো একেবারে খোলাসা করেই বলে ডক্টর গোল্ডের কাছে এবং ভয়ংকর কিছু অভিজ্ঞতা তুলে ধরে। তো,ডক্টর গোল্ড তার বইটিতে লিখেছিলেন যে,এডওয়ার্ড তার মাথার পিছনের দিকে সম্পূর্ণভাবেই দ্বিতীয় আরেকটা মুখ নিয়ে জন্মেছিলো। মূলত এই ব্যাপারটা মারাত্মক রকম অস্বস্তিতে ভোগাতো এডওয়ার্ডকে। অবস্থা এতটাই মারাত্মক আকার ধারণ করেছিলো যে, এডওয়ার্ড পুরোপুরিই তার পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বসবাস করা শুরু করে,এমনকি সে নিজের পরিবারের সদস্যদের সাথেও কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিলো। বুঝতেই পারছেন যে,সেসময় ব্রিটিশ অভিজাত পরিবারগুলোকে যথেষ্ট রেস্ট্রিকশনের মধ্যে থাকতে হতো। আর এর কারণেই এডওয়ার্ডের ডিসঅর্ডারটা মেনে নিতে পারেনি তার পরিবার। এ ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছিলো এডওয়ার্ড আর সেকারণেই আশপাশের সবার থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সে।

এডওয়ার্ডের ব্যাপারে ডক্টর গোল্ড তার বইতে লিখেছিলেন যে,”Edward was a young man of fine attainments,a profound scholar and a musician of rare ability….”

এডওয়ার্ডের প্রথম মুখটা অর্থাৎ আসল চেহারাটা ছিলো স্বাভাবিক,সুদর্শন কিন্তু দ্বিতীয় মুখটা অর্থাৎ মাথার পেছন দিকের চেহারাটা ছিলো অনেকটাই বৃদ্ধ মহিলার মতো। এ দ্বিতীয় মুখটার ব্যাপারে ডক্টর গোল্ড লিখেছিলেন, “The second face is lovely as a dream,hideous as a devil!”
এডওয়ার্ড বলতো যে,সে যখন এসব ব্যাপারে চিন্তা করে কান্না করতো,তখন মাথার পিছন থেকে সে তাচ্ছিল্যের হাসি শুনতে পেত…. ব্যাপারটা একটু ভাবুন,আপনি যখন একমুখে কাঁদছেন আর আপনার অন্য মুখটাই তখন টিটকারি মেরে হাসছে! It’s horrible!

এখানে একটা কথা হলো যে,এডওয়ার্ডের সেকেন্ড ফেস মানে পেছনের মুখটা অনেকটাই তার কন্ট্রোলের বাইরে ছিলো,শুধুমাত্র চোখ দুটো ছাড়া!

এডওয়ার্ড বলতো যে,মাথার পেছনের চোখ দুটো দিয়ে সে পেছনের প্রায় সবকিছুই দেখতে পেতো; এই যেমন ধরুন,আপনার পেছনে হয়তো কেউ দাঁড়িয়ে আছে,আমি আপনি হয়তো তাকে দেখতে পাবো না,কিন্তু এডওয়ার্ড তার পেছনের চোখদুটো দিয়ে প্রায় সবকিছুই দেখতে পারতো এবং তার পেছনের চোখ দুটোর অপটিক স্নায়ুগুলো ছিলো পুরোপুরি সচল!

সবচাইতে মারাত্মক আর ভয়ংকর যে ব্যাপারটা এডওয়ার্ডের সাথে ঘটতো সেটা হলো,এডওয়ার্ড যখন রাতে ঘুমাতো তখন প্রায় সময়ই তার ঘুম ভেঙে যেত, সে শুনতে পেত যে তার রুমে কেউ ফিসফিস করে কথা বলছে। পরে এডওয়ার্ড বুঝতে পারতো যে,তার ওই দ্বিতীয় মুখটাই আসলে ফিসফিস করছে। যদিও এই দ্বিতীয় মুখটার ভয়েস অডিবল ছিলো না। প্রথমদিকে এই ব্যাপারটাতে মারাত্মক রকমের ভয় পেয়ে যেত সে,পরে অবশ্য এই ব্যাপারটাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। ভয়ংকর এসব অভিজ্ঞতার কারণে এডওয়ার্ড তার সেকেন্ড ফেসটাকে “Devil Twin” বলে অভিশাপ দিত। এডওয়ার্ড ডক্টর গোল্ডকে কাঁদতে কাঁদতে বলতো যে,এসবই তার পূর্বপুরুষদের পাপাচারের ফল, যার পরিণাম তাকে ভোগ করতে হচ্ছে।

এসব কারণে এডওয়ার্ডের শারীরিক অবস্থা দিন দিন খারাপের দিকে মোড় নিচ্ছিলো আর একারণেই ম্যানভার্স আর ট্রেডমিল নামে দুজন ফিজিশিয়ান নিয়োগ করে তার পরিবার। এডওয়ার্ড মাঝে মাঝে ওই দুজন ফিজিশিয়ানকে বলতো,”আপনারা আমার শরীর থেকে ওই শয়তানের মাথাটাকে সরিয়ে দিন,এতে আমি যদি মারাও যাই তবুও আমি শান্তি পাবো। কিন্তু এভাবে আমি আর ওই “ডেমন ফেস”টা নিয়ে বাঁচতে চাই না।”

এত সিকিউরড থাকার পরও কোনো একদিন বিষ পান করে সুইসাইড করে এডওয়ার্ড। যেসময় তার বয়স ছিলো মাত্র তেইশ বছর! এটা খুবই অনুমেয় যে,এই সেকেন্ড ফেসটাই এডওয়ার্ডের মৃত্যুর জন্য দায়ী,যেকারণে তার মেন্টাল হেলথের উপর মারাত্মক চাপ পড়েছিল। আর মূলত এর ফলেই সুইসাইড করতে বাধ্য হয় এডওয়ার্ড। মৃত্যুর আগে এডওয়ার্ড একটা সুইসাইড নোট লিখে যায়,যেটাতে লিখা ছিলো-
“Please,destroy the ‘demon face’ before my burial,lest it continues it’s dreadful whispering in my grave”

এবার এই সেকেন্ড ফেসটার মেডিক্যাল টার্মে আসি। মেডিকেলের ভাষায় এই জেনেটিক ডিসঅর্ডারটাকে বলা হয় “Diprosopus”…. এই ডিপ্রোসোপাস শব্দটা একটা গ্রীক শব্দ যেটা কিনা ল্যাটিন ভাষা থেকে উদ্ভুত। এর অর্থ হলো “দুই মুখওয়ালা মানুষ” বা “Two-faced man”। অনেকসময় এই জেনেটিক ডিসঅর্ডারটাকে “Craniofacial duplication” ও বলা হয়ে থাকে। এই ক্রেনিওফেসিয়াল ডুপ্লিকেশন খুবই রেয়ার একটা কনজেনিটাল ডিসঅর্ডার যা দ্বারা আপনার পুরো মুখ কিংবা মুখমণ্ডলের অংশবিশেষের প্রতিলিপি তৈরি হয়। অনেকেই আবার এই ক্রেনিওফেসিয়াল ডুপ্লিকেশনকে “পলিসেফালি”র সাথে গুলিয়ে ফেলে। যদিও দুটো ডিসঅর্ডার একে-অন্যের থেকে পুরোপুরিই আলাদা। “পলিসেফালি” মানে হলো দুটো ভিন্ন ভিন্ন মাথা নিয়ে জন্মানো। আর ক্রেনিওফেসিয়াল ডুপ্লিকেশনের কথা তো বললামই!

তো,কথা হলো,এই ক্রেনিওফেসিয়াল ডুপ্লিকেশন কি কারণে হয়ে থাকে?
– অনেকেই বলে থাকেন যে,এই অস্বাভাবিকতা দুটো ভ্রূণের মিলন বা অসম্পূর্ণ পৃথকীকরণের কারণে হয়। আসলে এটা পুরোপুরিই ভুল ব্যাখ্যা। এই ডিসঅর্ডারটা হয় মূলত SHH(Sonic Hedgehog) প্রোটিনের অস্বাভাবিক আচরণের কারণে। গবেষণায় দেখা গেছে যে,ভ্রূণের ক্রমবিকাশের সময় এই SHH প্রোটিন এবং তার অনুরূপ জিনগুলো ক্রেনিওফেসিয়াল প্যাটার্নিংয়ে সংকেত প্রদান করে।

কিভাবে হয় এই ক্রেনিওফেসিয়াল ডুপ্লিকেশন?
– মূলত এই SHH প্রোটিন আমাদের মুখের অাকৃতি সম্প্রসারণে এবং গাঠনিক প্রতিলিপি তৈরিতে কাজ করে থাকে। আর,এই SHH প্রোটিন যখনই অস্বাভাবিক আচরণ করে ঠিক তখনই শুরু হয় বিশৃংখলা। ব্যাপারটা কিভাবে ঘটে জানেন?
আপনার মুখমন্ডল যতই সম্প্রসারিত হতে থাকে ততই আরো কিছু প্রতিলিপি তৈরি হতে থাকে অনেকটা আয়নার প্রতিবিম্বের মতো। আর,এই SHH প্রোটিন অস্বাভাবিক আচরণ করলেই ব্যাপারটা কন্ট্রোলের বাইরে চলে আর ঠিক তখনই জেনেটিক ডিসঅর্ডার দেখা যায়!

এই সেকেন্ড ফেসের ব্যাপারটাতে এডওয়ার্ড মর্ড্রেক-কেই একমাত্র ব্যক্তি হিসেবে ধরা হয়,যার দুটো মুখই প্রায় সমানভাবে নিজেদের এক্সপ্রেস করতে পারতো। আই মিন, হাসি,কান্না,রাগ অভিমান এসব এক্সপ্রেশন গুলো শুধুমাত্র এডওয়ার্ডের মধ্যেই দেখা গেছিলো। যদিও এই ক্রেনিওফেসিয়াল ডুপ্লিকেশন ডিসঅর্ডার আরো অনেকের মধ্যেই দেখা গেছে। কিন্তু তাদের কারোরই এই সেকেন্ড ফেসটা ঠিক ততটা কার্যকরী ছিলো না,যতটা না এডওয়ার্ডের ছিলো।

এডওয়ার্ডের সমসাময়িক আরো একজন মানুষের মধ্যে craniopagus parasiticus( কনজেনিটাল ডিসঅর্ডারের আরেক রূপ) দেখা গিয়েছিলো; মেক্সিকোর প্যাসকুয়েল পিনোন(১৮৮৯-১৯২৯)। তার ক্ষেত্রে সেকেন্ড ফেসটা ছিলো মূলত মাথার উপরের দিকে(ছবি কমেন্টে)…. একারণেই পিনোনকে ডাকা হতো “Two-headed Man” নামে।


দুর্ভাগ্যের ব্যাপার হলো,ডিপ্রোসোপাস বা সিডি(Craniofacial Duplication) নিয়ে জন্মানো বেশিরভাগ শিশুই খুব বেশিদিন বাঁচে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভ্রূণ অবস্থায় মৃত্যু হয় তাদের। এ ব্যাপারে ভালো উদাহরণ হতে পারে, ২০০৮ সালে ভারতের দিল্লীর সোহানপুরে জন্ম নেওয়া চার চোখ,দুই নাক আর দুই মুখওয়ালা শিশু লালী সিং(ছবি কমেন্টে)। জন্মের মাত্র দুই মাসের মাথায় মারা লালি…. একইভাবে ২০১৪ সালের ৮ই মে জন্ম নেয় ফেইথ এন্ড হোপ হাওয়ি। এদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা হয়েছিলো ব্রেনে। আর একারণেই একই দেহে জন্মাবার পরও তারা একেবারে দুটো ভিন্ন মানুষের মতো আচরণ করতো। অবশ্য দুর্ভাগ্যজনকভাবে জন্মের মাত্র ১৯ দিনের মাথায় ফেইথ ও হোপ হাওয়ি মারা যায়।

তবে,এই ডিপ্রোসোপাস বা ক্রেনিওফেসিয়াল ডুপ্লিকেশন যে শুধুমাত্র মানুষের ক্ষেত্রেই হয়,তা না। অন্যান্য প্রাণীদের ক্ষেত্রেও এই ব্যাপারটা লক্ষ্য করা যায়। তবে,খুব কম ক্ষেত্রেই তারা সার্ভাইভ করতে পারে।

ডিপ্রোসোপাসের এই ব্যাপারটার কারণেই অনেকে ভাবে যে,যেখানে এই ডিসঅর্ডার নিয়ে জন্মানো মানুষ বা অন্যান্য প্রাণীর সার্ভাইভাল রেট একেবারেই শূন্যের কোটায় সেখানে এডওয়ার্ড মর্ড্রেক কিভাবে এতদিন বেঁচে ছিলো! ব্যাপারটা নিয়ে আজও পর্যন্ত ডিবেট রয়ে যায়। তবে,এডওয়ার্ড যদি এই ডিপ্রোসোপাস নিয়ে ২৩ বছর বেঁচেও থাকে,তবে সেটা হবে সম্পূর্ণই মিরাকল! কেননা এডওয়ার্ডের এতগুলো বছর বেঁচে থাকার পেছনে আসলে রহস্য কি সেটা এখনো পর্যন্ত গবেষকরা সমাধান করে উঠতে পারেননি!

©Info Source:
[ Informations gathered from: Wikipedia, Mysterious Universe, Mysterious Facts, Strange Biology, Pictures In History ]

বাংলাদেশের অর্থ চুরি: ফিলিপাইনে ব্যাংকারের সাজা

মাইয়া দেগিতো

তিন বছর আগে সাইবার জালিয়াতির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ লোপাটের ঘটনায় ম্যানিলাভিত্তিক রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) তৎকালীন এক শাখা ম্যানেজারকে দোষী সাব্যস্ত করে সাজা দিয়েছেন ফিলিপাইনের একটি আদালত।

বৃহস্পতিবার (১০ জানুয়ারি) মাইয়া দেগিতো নামে ওই নারী কর্মকর্তাকে ৩২ থেকে ৫৬ বছর কারাদণ্ড এবং ১০৯ মিলিয়ন বা ১০ কোটি ৯০ লাখ ডলার অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে আটটি অর্থপাচারের অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় প্রত্যেকটিতে চার থেকে সাত বছর করে কারাদণ্ড ঘোষিত হয়।

বিশ্বজুড়ে আলোচিত সেই সাইবার চুরির ঘটনায় এই প্রথম কাউকে দোষী সাব্যস্ত করে সাজা দেওয়া হলো।

হ্যাকাররা সুইফট কোড (এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে অর্থ স্থানান্তরের সংকেতলিপি) চুরি করে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে ১০১ মিলিয়ন ডলার (১০ কোটি ১০ লাখ ডলার) লোপাট করে নিয়ে যায়।

ওই অর্থ প্রথমে মাইয়া দেগিতোর পরিচালিত আরসিবিসির মাকাতি শাখার এক অ্যাকাউন্টে পাচার হলেও পরে তা মুদ্রা লেনদেনকারী ফিলরেম নামের এক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে চলে যায় তিনটি ক্যাসিনোতে। সেই অর্থের একটি অংশ আবার চলে যায় শ্রীলঙ্কায়।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানা যায়, মাইয়া দেগিতো ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে অর্থ নিয়ে আসা এবং তা চারটি অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে জমা করার বিষয় তদারকি করেছিলেন বলে রায়ে উল্লেখ করেছেন আদালত।

যদিও গ্রেফতারের পর থেকেই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিলেন মাইয়া। আদালতেও তিনি দাবি করেছেন, আরসিবিসির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তাকে কিছু কাজ করতে হয়েছে।

তবে আদালত রায়ে বলেছেন, অবৈধ অর্থ লেনদেনে তার কিছুই করার ছিল না বলে মাইয়া যে দাবি করেছেন, তা পুরোপুরি নির্জলা ও বড় ধরনের মিথ্যা।

মাইয়ার আইনজীবীরা জানিয়েছেন, এ রায়ে তারা হতাশ। সাজার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবেন তারা।

নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকউন্টে রক্ষিত ওই অর্থ ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি চুরি হলেও জানাজানি হয় পরের মাস মার্চে। এ নিয়ে তখন ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। সরকারের পক্ষ থেকে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার এবং অর্থ ফেরত আনার আশ্বাস দেওয়া হয়। নৈতিক দায় নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর আতিউর রহমান পদত্যাগও করেন।

এরপর সরকারের নানা প্রক্রিয়া ও দেনদরবারের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কায় যাওয়া ১ কোটি ৪৫ লাখ ডলার ও ফিলিপাইনে যাওয়া ১ কোটি ৪৫ লাখ ডলার ফেরত আনা হয় কয়েক মাসের মধ্যেই। বাকি অর্থ এখনো ফেরত আসেনি।

এই রিজার্ভ চুরির ঘটনায় মাইয়া দেগিতো সম্পৃক্ত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে আরসিবিসি থেকে তাকে বরখাস্ত করা হয়। এরপর গত বছরের আগস্টে মাইয়াকে গ্রেফতার করে সেখানকার সরকার। বিচার প্রক্রিয়ার পর বৃহস্পতিবার এ সাজা ঘোষণা করলেন আদালত।

জানুয়ারি ১০, ২০১৯

(তথ্যসূত্রঃ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম)

যেভাবে হয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের ১ বিলিয়ন ডলার ডাকাতি

২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারী মাস।

প্রথম সপ্তাহেই গোটা দেশ তথা গোটা বিশ্বকে তোলপাড় করে দিলো একটা সংবাদ, সাইবার ডাকাতির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক এর ফেডেরাল রিজার্ভ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যার বাংলাদেশী মূল্যমান ৮৪,১৩১,০০০,০০০ টাকা। এত সিকিওরড পেমেন্ট সিস্টেমকে হ্যাক করার মাধ্যমে যেভাবে হ্যাকাররা এই বিশাল অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে, তা এখনো বিস্ময়ের কারণ! বাংলাদেশ সরকার বেশিরভাগ অর্থ রিকোভার করতে পারলেও ৮১ মিলিয়ন ডলার ঠিকই হাতিয়ে নিয়েছে হ্যাকাররা। এবং যা কিনা ব্যাংক ডাকাতির ইতিহাসে সবচাইতে বড় একক ডাকাতির উদাহরণ হয়ে থাকবে। তবে এর জন্য হ্যাকাররা অসাধারণ একটা পরিকল্পনা করে মাঠে নেমেছিলো, ভিকটিম হওয়া সত্ত্বেও আপনি যখন তাদের পরিকল্পনাটা দেখবেন, অবাক হয়ে যাবেন।

মূল ঘটনার সূত্রপাত ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬। রবিবার।বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাপরিচালক সকাল বেলা অফিসে ঢুকলেন। ঢুকেই তিনি গেলেন একাউন্টস এবং বাজেটিং ডিপার্টমেন্টে। দশতলার এই সেকশনটি বাংলাদেশ ব্যাংকের সবচাইতে রেস্ট্রিক্টেড এরিয়া। এখানে কর্মরত কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নিং বডির সদস্য ব্যতিত কারো ঢোকার অনুমতি নেই। পরিচালকের এখানে আসার কারণ হচ্ছে ব্যাংকের পেমেন্ট হ্যান্ডলিং সফটওয়ার সুইফট (S.W.I.F.T.) এর সাথে কানেক্টেড প্রিন্টার, যার কাজ হচ্ছে সুইফটের মাধ্যমে সম্পন্ন সকল লেনদেনের লগ প্রিন্ট করা, সেটি গত কয়েকদিন থেকে কাজ করছে না। দ্রুত আইটি সেকশন থেকে লোক এনে প্রিন্টার ঠিক করা হলো। বিকেলের দিকে ঠিক হওয়ার পর পরই অটোমেটেড প্রিন্টারটি সফটওয়্যারের ব্যাকলগ থেকে প্রিন্ট করতে থাকলো লেনদেনের সকল ইতিহাস।

প্রিন্ট হওয়া ট্রানজ্যাকশন রেকর্ড হাতে নিয়ে চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো সবার। কিছু একটা তো গোলমাল আছে। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৩৫টি ট্রানজ্যাকশন অর্ডার দেয়া হয়েছে নিউইয়র্কের ফেডেরাল রিজার্ভ ব্যাংককে। যেখানে বাংলাদেশের ইন্টারন্যাশনাল সেটলমেন্ট অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় ৯৫১ মিলিয়ন ডলার বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন একাউন্টে পেমেন্ট হিসেবে পাঠাতে বলা হয়েছে। মহাপরিচালকের মেরুদন্ড বেয়ে একটা ঠান্ডা স্রোত নেমে গেলো। কারণ পেমেন্ট অর্ডার গুলো এখান থেকেই কনফার্ম করা হয়েছে এবং যখন করা হয়েছে তখন বাংলাদেশ ব্যাংকে বৃহস্পতিবার রাত, অফিসে কেউই ছিল না। তিনি দ্রুত যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেন নিউইয়র্ক ফেডারেল ব্যাংকে পেমেন্টগুলো থামানোর জন্য। কিন্তু আমেরিকায় রবিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন বিধায় সেদিন কেউই ছিলো না ব্যাংকে।

প্রশ্ন আসতে পারে, এভাবে কি এত বড় এমাউন্ট পাঠানো সম্ভব কিনা। কিংবা রিকোয়েস্ট পাঠানোর পর নিউইয়র্কে এত বড় এমাউন্ট দেখে কারো সন্দেহ হলো না কেন। উত্তর হচ্ছে, এমাউন্ট পাঠানো সম্ভব এবং এর জন্য সন্দেহ না করার কারণ হচ্ছে সুইফট সফটওয়্যার। গোটা বিশ্বের প্রায় দেড়শো দেশে সুইফট ব্যাংকিং সফটওয়্যার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সুইফটকে বর্তমান বিশ্বে সবচাইতে নির্ভরযোগ্য ট্রানজ্যাকশন ও পেমেন্ট অর্ডার সিস্টেম হিসেবে ধরা হয়। তাহলে স্বভাবতই প্রশ্ন আসে, এত নিরাপদ একটা সফটওয়্যারকে হ্যাকাররা ব্রিচ করলো কিভাবে? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে আমাদের চলে যেতে হবে মূল ঘটনার আরো ৯ মাস আগে।

মে, ২০১৫। ফিলিপাইন।

ম্যানিলা শহরের বাইরে জুপিটার স্ট্রিটের আর সি বি সি ব্যাংক শাখায় ঢুকলেন চারজন ভিন্ন ভিন্ন লোক। প্রত্যেকেই একটি করে ব্যাংক একাউন্ট খুললেন, একাউন্টে ৫০০ ডলার ডিপোজিট রেখে তারপর বেরিয়ে গেলেন। তারা আর কখনোই ফেরেননি ব্যাংক এ। এই ৯ মাস ধরে কোনধরণের ট্রানজ্যাকশন একটিভিটি ছাড়াই পড়ে রইলো এই চারটি একাউন্ট।

এর ৮ মাস পর, জানুয়ারী ২০১৬। ঢাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বাজেটিং ডিপার্টমেন্টের একজন কর্মকর্তা তার ইমেইলে আসা পেমেন্ট রিকোয়েস্টগুলো কনফার্ম করছিলেন। রুটিন ওয়ার্ক। কিন্তু তিনি খেয়াল করেন নি যে একই পেমেন্টের রিকোয়েস্ট তিনি দুটি ভিন্ন মেইলে কনফার্ম করেছেন। আর দ্বিতীয় যে মেইলটি ছিলো, সেটি আসলে একটা ফেইক পেমেন্ট রিকোয়েস্ট। সেই কর্মকর্তা জানলেন না, যে কনফার্মেশন বাটনটিতে প্রেস করে তিনি তার কম্পিউটারটিতে হ্যাকারদের মেইলের মাধ্যমে পাঠানো ড্রাইডেক্স (DriDex) ম্যালওয়্যারটি ইন্সটল করার অনুমতি দিয়েছেন।

ড্রাইডেক্স ইন্সটল হয়ে গেলো। এই একমাস ধরে চললো হ্যাকারদের অপেক্ষার পালা। এই এক মাসেই তারা ড্রাইডেক্সের ব্যাকডোরের মাধ্যমে নিয়ে নিলো বাংলাদেশ ব্যাংক এর সুইফট অ্যাকাউন্ট এর লগ ইন ইনফরমেশন সহ দরকারি অন্যান্য তথ্য। শুধু তাই নয়, গত কয়েকদিন ধরে যে সুইফটের সাথে কানেক্টেড প্রিন্টার ম্যালফাংশনড হয়ে কাজ করছিলো না, সেটিও করা হলো ইচ্ছাকৃত ভাবে। উদ্দেশ্য, হামলার জন্য সময় জোগাড় করা। এবার হামলার পালা।

সপ্তাহের শেষ দিনে ৪ ফেব্রুয়ারী অফিস শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের শেষ কর্মকর্তাটিও যখন বেরিয়ে গেলেন, তার কিছুক্ষণ পরেই অটোমেটিক অন হয়ে গেলো বাজেটিং ডিপার্টমেন্টের সুইফট অপারেটিং কম্পিউটার। হ্যাকাররা দেখে নিলো প্রিন্টার ম্যালফাংশনড হয়ে আছে কি না। নিশ্চিত হয়েই বিশ্বের কোন এক প্রান্ত থেকে লগ ইন করা হলো বাংলাদেশ ব্যাংক এর সুইফট একাউন্টে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জন্য নিউইয়র্কের ফেডেরাল রিজার্ভ ব্যাংকে পাঠিয়ে দেয়া হলো ৩৫ টি পেমেন্ট রিকোয়েস্ট, যার মোট পরিমাণ প্রায় এক বিলিয়ন ডলার। রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে সুইফট ডেটাবেস থেকে মুছে দেয়া হলো সকল লগ ইন ইনফরমেশন। যার ফলে জানার কোন উপায় রইলো না আসলে কোন আইডি দিয়ে লগ ইন করা হয়েছিলো।

হ্যাকারদের পরিকল্পনা ছিলো অসাধারণ! একেবারে মাপা টাইমলাইনে প্রত্যেকটা জিনিস ছিলো সাজানো। হামলা করা হলো বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার, সপ্তাহের শেষ দিন। বাকি দুইদিন বন্ধ। নিউইয়র্ক পেমেন্ট রিকোয়েস্ট রিসিভ করলো শুক্রবার, সেগুলো প্রসেস করে সারাদিন শেষে বিকেলে পাঠিয়ে দেয়া হলো। পরের দিন শনিবার, ও এর পরদিন রবিবার। ফেডেরাল রিজার্ভ ব্যাংক বন্ধ। রবিবারে বাংলাদেশ ব্যাংক ঘটনা বুঝতে পারলেও পেমেন্ট রিকোয়েস্ট আটকানো গেলো না কারণ নিউইয়র্কের ব্যাংক বন্ধ, সেখানে অভিযোগ শোনার জন্য কেউ নেই।

হামলার আগ পর্যন্ত ভাগ্য হ্যাকারদের পক্ষে থাকলেও এবার ভাগ্যদেবী মুখ ফেরালেন বাংলাদেশের দিকে। পেমেন্ট রিকোয়েস্টে যে ডিটেইলস দেয়া হয়েছিলো, তার প্রায় বেশ কয়েকটিতে সন্দেহজনক কী ওয়ার্ড থাকায় নিউইয়র্ক ফেডেরাল রিজার্ভ ব্যাংকের অটোমেটেড সিস্টেম সেগুলো কমপ্লিট হওয়ার আগেই আটকে দিলো। শুধু মাত্র সন্দেহজন কী ওয়ার্ড নয়, এর বাইরেও এত বড় পরিমাণের অর্থ ব্যাংকে না দিয়ে ব্যক্তিগত একাউন্টে পাঠানো সন্দেহেজনক বিধায় সেগুলোও আটকানো হলো এবং বলা হলো ম্যানুয়াল রিভিউ এর জন্য। এর মানে হচ্ছে সোমবারে ফেডেরাল রিজার্ভ ব্যাংক এর কর্মকর্তারা এসে এই রিকোয়েস্টগুলো সম্পর্কে বাংলাদেশ থেকে লিখিত অনুমতি পাওয়ার পরই এই পেমেন্টগুলো ক্লিয়ার করা হবে।

তবে বাংলাদেশ থেকে ইতোমধ্যেই সোমবার সকালে জানিয়ে দেয়া হলো পুরো ঘটনা। দ্রুত একশন নিলো নিউইয়র্ক, আটকে দেয়া হলো ৩০টি পেমেন্ট। বাংলাদেশ ফিরে পেলো ৮৫০ মিলিয়ন ডলার। তবে বাকি ৫টি রিকোয়েস্ট তখনো কমপ্লিট হওয়ার পথে। এর মধ্যে একটি ট্রানজ্যাকশনের রেকর্ড ট্র্যাক করা হলো শ্রীলংকায়। শ্রীলংকার প্যান এশিয়া ব্যাংকে “শালিকা ফাউন্ডেশন” নামে নন প্রফিট এক এনজিওর একাউন্টে জমা হলো বিশ মিলিয়ন ডলার, নিউইয়র্ক থেকে রাউটিং ব্যাংক হিসেবে জার্মানির ডয়েচে ব্যাংক থেকে অর্থটা রিসিভ করলো প্যান এশিয়া ব্যাংক। প্যান এশিয়া ব্যাংকের একজন কর্মকর্তার সন্দেহ

হলো, কারণ শ্রীলংকার মত একটা দেশে একটা এনজিও সংস্থার একাউন্টে এত বড় এমাউন্ট আসাটা একটু সন্দেহজনক। তাই তিনি পেমেন্ট রিসিভ কনফার্ম না করে ডয়েচে ব্যাংকে রিকোয়েস্টটি ফেরত পাঠালেন ভেরিফিকেশনের জন্য।

যদিও রাউটিং ব্যাংক হওয়ায় নিউইয়র্ক থেকে টাকা কোথায় যাচ্ছে তা নিয়ে মাথা ঘামান না ডয়েচে ব্যাংক এর কর্মকর্তারা, তবে এবার তারাও একটু নড়েচড়ে বসে রিভিউ করতে বসলেন। দেখা গেলো, তাদের অটোমেটেড সিস্টেম ও ভেরিফাই করতে গিয়ে কয়েকটি রেড ফ্ল্যাগ দিচ্ছে এই ট্রানজ্যাকশনে। প্রথমত, হ্যাকারদের সামান্য একটা টাইপিং মিস্টেকেই গোটা সন্দেহের উদ্রেক ঘটেছে। পেমেন্ট রিকোয়েস্টে শালিকা ফাউন্ডেশন এর নাম লিখা হয়েছে শালিকা ফ্যান্ডেশন (Shalika Fandation), আরেকটু ঘাঁটতেই বেরিয়ে এলো শালিকা ফাউন্ডেশন আসলে একটু ভুয়া কোম্পানি এবং এর কোন অস্তিত্ব নেই। এ কারণেই পেমেন্ট রিকোয়েস্ট ক্যান্সেল করে ফেরত পাঠানো হলো নিউইয়র্কে। বাংলাদেশ ফেরত পেল আরো ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

তবে শেষ রক্ষা আর হলো না। বাকি যে চারটি রিকোয়েস্ট ছিলো, সেগুলো ঠিকই হাতিয়ে নিলো হ্যাকাররা। ২০১৫ সালের মে মাসে ম্যানিলার বাইরের আর সি বি সি ব্যাংকে যে চারটি নতুন একাউন্ট একেবারেই ইন্যাক্টিভ ছিলো, সেগুলো তে হঠাত করে মোট এসে জমা হলো ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। শুক্রবারে এই টাকা এসে জমা হলেও সেটা রিভিউ করার কোন সুযোগই পায়নি আর সি বি সি ব্যাংক। কারণ শনিবার ও রবিবার সাপ্তাহিক ছুটি ছিলো। সোমবারে বাংলাদেশ ব্যাংক ফিলিপাইনে যোগাযোগ করতে গিয়ে জানতে পারে সোমবারে চাইনিজ নববর্ষ হওয়ায় ব্যাংক বন্ধ রয়েছে। এই সুযোগে হ্যাকাররা সেই টাকা ক্যাসিনোতে ইলেক্ট্রনিক ট্রান্সফার করে এবং হার্ড ক্যাশ হিসেবে উইথড্র করে নেয়। যে কারণে কে এই টাকা উইথ ড্র করেছে সেটার কোন হদিসই থাকলো না।

তবে আর সি বি সি ব্যাংক এ সিসিটিভি ফুটেজ চেক করে একাউন্ট খুলতে আসা চারজনের মধ্যে দুইজনের পরিচয় পাওয়া গেলো। দুইজনই চায়নিজ। একজনের নাম ডিং ঝিঝে এবং অপরজনের নাম গাও শুহুয়া। এরা কেবল মূল চক্রের সহায়তাকারী হিসেবে কাজ করেছে। তথ্য পাওয়ার আশায় পুলিশ এই দুজনকে ধরার জন্য অভিযান চালালেও জানা গেলো উইথ ড্র করা অর্থ নিয়ে ইতোমধ্যেই ফিলিপাইন থেকে চায়না অধ্যুষিত ম্যাকাও এ পালিয়ে গেছে এরা দুজন। সুতরাং ধরার কোন উপায়ই রইলো না।

তবে বাংলাদেশের সাইবার সিকিউরিটি এক্সপার্টরা ড্রাইডেক্স ম্যালওয়্যারটি এনালাইজ করে বুঝতে পারলেন এরকম ঘটনা এই ম্যালওয়্যার দিয়ে আরো ঘটানো হয়েছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, দক্ষিণ আমেরিকা, ইউরোপ ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ এবং এশিয়ার অন্যান্য দেশেও এভাবে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটেছে। তবে এত পরিমাণ অর্থ কখনোই হাতিয়ে নেয়া সম্ভব হয় নি যেটা বাংলাদেশের সাথে হয়েছে। এই হ্যাকারগ্রুপ এর নামও জানা গেলো পরবর্তীতে। তাদের নাম লাজারাস (Lazarus)।

তবে ভ্রুঁ কুচকে ওঠার মত ব্যাপারটা তখনই ঘটলো, যখন ব্যাকলগের এক কোনায় হ্যাকারদের লগ ইন ইনফরমেশনে একটি সন্দেহজনক আইপি এড্রেস চোখে পড়লো। আইপি এড্রেসটি নর্থ কোরিয়ার। হ্যাকাররা তাদের সকল ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট মুছে দেয়ার চেষ্টা করলেও কয়েকজায়গায় ঠিকই সেটার ট্রেস রয়ে গেলো। জানা গেলো, হামলার সময় অন্তত একবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সুইফট একাউন্টে উত্তর কোরিয়া থেকে অ্যাকসেস করেছে হ্যাকাররা। এছাড়াও ড্রাইডেক্স ম্যালওয়্যাররের কম্পিউটার কোড এর কয়েক জায়গায় কোরিয়ান ভাষার “মন্তব্য” যোগ করা ছিলো।

এমনটি হতে পারে যে তদন্তকে ভুল দিকে চালনা করার জন্য ইচ্ছে করেই এমনটি করা হয়েছে, তবে সন্দেহ তারপরও থেকে যায়। কারণ উত্তর কোরিয়ায় ইন্টারনেট অ্যাকসেস সীমিত। সরকারের মনিটরিং এর বাইরে কেউ ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে না। তাহলে সরকারি মদদ ব্যতিত কেউ এভাবে বাইরের একটা দেশে ব্যাংক ডাকাতি করতে পারাটা মোটামুটি অসম্ভব। আর যদি উত্তর কোরিয়াকে ফাঁদে ফেলার জন্যই করা হয়ে থাকে, তাহলে এত দেশ থাকতে কেন উত্তর কোরিয়া সেটা নিয়েও সন্দেহ জাগে।

কারণ বেশিরভাগ সিকিউরিটি এক্সপার্ট বলছেন, এই হামলার পেছনে উত্তর কোরিয়ার হাত থাকার সম্ভাবনা বেশি। কারণ হ্যাকার গ্রুপ লাজারাস এর আগে শুধু ব্যাংক ডাকাতি নয়, এর বাইরেও দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সাইবার সন্ত্রাসমূলক ক্যাম্পেইন পরিচালনা করেছে। শুধু তাই নয়, ২০১৪ সালে সনি পিকচারস এন্টারটেইনমেন্টের সার্ভার থেকে হলিউড সিনেমা The Interview এর প্লট চুরি করে লাজারাস। এই সিনেমায় দেখানো হয়েছিলো কিভাবে সিআইএ নর্থ কোরিয়ান লিডার কিম জং উন কে হত্যা করার পরিকল্পনা করেছিলো। লাজারাস সনি সার্ভার হ্যাক করে হুমকি দিয়েছিলো যে যদি এই সিনেমা নিষিদ্ধ না করা হয় তাহলে গোটা আমেরিকায় সন্ত্রাসী হামলা চালানো হবে। যদিও উত্তর কোরিয়া এই ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে।

এর পাশাপাশি উত্তর কোরিয়ার উপর এর আগেও বিভিন্ন দেশে সাইবার এটাক চালিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে নিজেদের সেনাবাহিনী, সামরিক শক্তি, সরকারি নামীদামী কর্মকর্তাদের দৈনন্দিন বিলাসবহুল জীবনের সকল খরচ মেটানোর অভিযোগ ছিলো। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে যে এত জায়গা থাকতে অর্থ নিয়ে কেন ম্যাকাও পালিয়ে যাবে ডিং ঝিঝে এবং গাও শুহুয়া? এখানেও উত্তর কোরিয়ার সম্পৃক্ততার দিকে আঙ্গুল তোলা যায় কারণ ম্যাকাও হচ্ছে বাইরের বিশ্বের সাথে উত্তর কোরিয়ার আর্থিক লেনদেনের কেন্দ্রবিন্দু। সুতরাং এই অর্থকে ম্যাকাও থেকে ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পিয়ং ইয়ং এ পাঠিয়ে দিলে কারো কিছু করার নেই।

বাংলাদেশের জন্য দূর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হচ্ছে এভিডেন্স থাকলেও সেটা তুলে ধরার কোন উপায় নেই। তবে যদি কোনদিন এটি প্রমাণ হয় তাহলে হয়তো এই ঘটনাটি মানব ইতিহাসে প্রথমবারের মত একটি দেশের সরাসরি অপর একটি দেশ থেকে ব্যাংক ডাকাতি করে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার উদাহরণ হিসেবে জ্বলজ্বল করবে।

Copied From: http://egiye-cholo.com/

অফিসের সময় নিজের প্রস্তুতি

আমরা বেশিরভাগই ডেস্কে, অর্থাৎ চেয়ার টেবিলে বসে কাজ করে থাকি। আর চেয়ার-টেবিলে বসে কাজ করা মানুষদের মধ্যেই ওজন বৃদ্ধি, হৃদরোগ, শরীর ম্যাজম্যাজ করা, অল্প কাজ করেই ক্লান্ত বোধ করা, কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলা – ইত্যাদি সমস্যা দেখা যায়।

অনেকেই কর্মজীবনের শুরুতে একটানা অনেক্ষণ বসে থেকে কাজ করেন। কিন্তু পরে আর সেইভাবে কাজ করতে পারেন না। কারণ কিছুদিন টানা এভাবে কাজ করলে শরীর ও মনে প্রভাব পড়ে।

প্রশ্ন করতে পারেন, তাহলে কি গভীর মনোযোগ দিয়ে একটানা কাজ করা খারাপ? ব্যাপারটা আসলে মোটেও সেরকম নয়। কিন্তু এর জন্য নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে।

কিন্তু যদি অল্প কিছু বিষয় মেনে চলেন, তাহলে কিন্তু খুব সহজেই টেবিল চেয়ারের কাজ বা ডেস্ক জবও উপভোগ করতে পারবেন – পাশাপাশি বসে কাজ করার ফলে যেসব শারীরিক অসুবিধা হয় – সেগুলো থেকেও বাঁচতে পারবেন।

এই লেখায় মূলত দু’টি বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। এক, কিভাবে বসতে হবে; দুই, কতক্ষণ একটানা কাজ করা ভালো। চলুন তাহলে, জেনে নেয়া যাক।

বসার আদর্শ পদ্ধতি:

চেয়ার-টেবিল বা ডেস্কে বসে কাজ করলে শরীর ধরে যাওয়াটা খুব স্বাভাবিক। শরীর ধরে যাওয়ার ফলে, গা ম্যাজম্যাজ করে আর দ্রুতই ক্লান্তি লাগতে শুরু করে। সেইসাথে দ্রুত ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

তবে ঠিকভাবে বসলে এত ক্লান্ত লাগবে না। খুব বেশি রিল্যাক্সড এবং খুব বেশি টাইট হয়ে বসা – কোনওটাই ভালো নয়। কম্পিউটারে বা কাগজ কলমে কাজ করার সময়ে খুব বেশি পেছনে হেলান দিয়ে বা সামনের দিকে ঝুঁকে বসবেন না। দুই ভাবেই আপনার পিঠে ও মেরুদন্ডে চাপ পড়ে। এতে পিঠ ও বাহু আড়ষ্ট হয়ে যায়, ফলে অস্বস্তি ও ঝিমানো ভাব চলে আসে। সেই সাথে ব্যাক পেইন হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। সবচেয়ে ভালো হয় যদি পিঠ সোজা করে বসে কাজ করতে পারেন। প্রয়োজনে মাঝারি সাইজের একটি কুশনে পিঠ ঠেকিয়ে বসে কাজ করুন।এতে এমনিতেই আপনার পিঠ সোজা হয়ে থাকবে, কিন্তু কোমরে চাপ পড়বে না। পিঠ এবং কাঁধ আড়ষ্টও হবে না। ব্যাক পেইনের ক্ষেত্রেও এই পদ্ধতিটি খুব কার্যকর। মূলত ব্যাক পেইন বা মেরুদন্ডের ব্যাথার মূল কারণই হল, বেশি ঝুঁকে কাজ করা।

আপনি যদি কম্পিউটারে কাজ করেন, তবে খেয়াল রাখুন যেন কম্পিউটারের কিবোর্ড ও মাউস কনুইয়ের সমান্তরালে থাকে। কাঁধ যেন স্বাভাবিকের চেয়ে উঁচু বা নিচু অবস্থায় রাখতে না হয়। এতে করে কিছুক্ষণ কাজ করার পরই কাঁধ আড়ষ্ট হবে না। কাঁধ আড়স্ট হয়ে গেলে কাঁধে ও ঘাড়ে ব্যাথা, ম্যাজম্যাজ করা, হাত অবশ হওয়া – এসব হতে পারে। এতে কাজে অসুবিধার সাথে শরীর দ্রুত ক্লান্ত হয়। চাঙ্গা থেকে অনেক্ষণ কম্পিউটারে কাজ করতে চাইলে অবশ্যই এটা করুন।

এই কথা কাগজ কলমে কাজ করার বেলায়ও সত্যি। ঘাড় গুঁজে বা মেরুদন্ড বাঁকা করে কাজ করলেও একই ধরনের অসুবিধা হয়। কাজেই কাগজ কলমের কাজের সময়েও সোজা হয়ে বসুন।

এই কথা শুধু কাজের জন্য নয় – পড়াশুনার সময়েও এইভাবে বসলে অনেক বেশি ভালোভাবে পড়াশুনা করা যায়।

কতটা সময় ধরে কাজ করবেন?

অনেক্ষণ এক নাগাড়ে বসে থাকলে পিঠ ধরে যায়। হাত-পায়ের জয়েন্টগুলো আড়ষ্ট হয়ে পড়ে। এমনকি যদি সঠিক ভাবে বসেও কাজ করেন – তবুও অনেক্ষণ একটানা বসে থাকবেন না। সবচেয়ে ভালো উপায় হল, প্রতি ২৫ মিনিট পরপর ৫ মিনিট একটু হাঁটাহাঁটি করা ও শরীর বাঁকিয়ে হাল্কা ব্যায়াম করা।

শরীরকে চাঙ্গা রাখার জন্য রক্তচলাচল গতিশীল রাখা খুব জরুরী। টানা বসে থাকলে রক্তচলাচল ধীর হয়ে পড়ে।ফলে শরীরে ক্লান্তি আসে, মনে হয় এনার্জি নেই।

কাজের গতি ঠিক রেখে শরীরের এনার্জি বৃদ্ধি করতে “পমোডরো টেকনিক” বেশ কাজে আসতে পারে। এই টেকনিকে প্রতিটি ওয়ার্ক সেশনকে ৪টি ২৫ মিনিটের সাব সেশনে ভাগ করা হয়। সব মিলিয়ে, ৪x২৫, মোট ১০০ মিনিটের সেশন। প্রথম ৩টি সাব সেশনে প্রতি ২৫ মিনিট পর পর ৫ মিনিটের একটি ব্রেক নিতে হয়। এই ব্রেকের সময়ে আপনি অবশ্যই চেয়ার ছেড়ে উঠবেন এবং একটু হাঁটাহাঁটি করবেন। ৪ নম্বর সাব সেশন, অর্থা‌ৎ শেষ ২৫ মিনিটের সেশন শেষ করে ১৫-২০ মিনিটের একটি বড় ব্রেক নিন। তারপর আবার ১০০ মিনিটের আরেকটি সেশন শুরু করুন।

এই পদ্ধতিতে কাজ করলে, কাজে যেমন ফোকাস থাকবে, তেমনি এনার্জিও থাকবে। এখানে মনে রাখতে হবে, প্রতি সেশনের পুরো ২৫ মিনিটই যেন আপনার মনযোগ যেন শুধু হাতের কাজটির ওপরেই থাকে। ফোকাস শিফট হলে মস্তিষ্ক দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়ে।

পমোডরো টেকনিক ছাড়াও ৫ মিনিটের শর্ট মেডিটেশনও বেশ কাজে দেয়। টানা কাজ করার পর আপনি যদি ৫ মিনিটের জন্য চোখ বন্ধ করে থাকেন – তবে মস্তিষ্ক অনেকটা চাপমুক্ত হয়ে যায়। এই ৫ মিনিট চেষ্টা করবেন কোনওরকম চিন্তা না করার। শুধু চোখের সামনের অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে থাকবেন। চাইলে অবশ্য সুন্দর কিছু দৃশ্য কল্পনা করার চেষ্টা করতে পারেন। এতে মন ফুরফুরে হবে।

পমোডরো টেকনিক ব্যবহার করলে যে কোনও একটি রেস্টিং সেশনেও এই মেডিটেশন করতে পারেন। অর্থা‌ৎ প্রতিটি ১০০ মিনিট ওয়ার্কিং সেশনে ৫ মিনিট মেডিটেশন। এই দু’টি পদ্ধতি মেনে কাজ করলেই আশা করা যায় আপনি অনেক ভালো ভাবে আপনার ডেস্ক জব করতে পারবেন।

শেষ কথা:

তরুন বয়সে, বা ক্যারিয়ারের প্রথম দিকে নিজের ইচ্ছামত কাজ করা তেমন প্রভাব না ফেললেও বয়স ৩৫ এর আশেপাশে গেলে এগুলো প্রভাব ফেলতে শুরু করে। কিন্তু প্রথম থেকেই যদি এই নিয়মগুলো মেনে কাজ করতে পারেন – তবে দীর্ঘদিন আপনি আপনার সেরা লেভেলে থেকে কাজ করে যেতে পারবেন। ফলে স্বাভাবিকের চেয়ে আপনার কাজের মান আরও অনেক ভালো হবে – এবং আপনি কাজ বা পড়াশুনায় অনেক বেশি সাফল্য পাবেন।

আসলে আমরা বুঝতেও পারি না যে, কিছু সাধারন নিয়ম মেনে চললে আমাদের জীবনে কত বড় ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে। আপনার প্রতি অনুরোধ থাকবে অন্তত কিছুদিনের জন্য হলেও এই পদ্ধতিগুলো চর্চা করে দেখার। নিজের পরিবর্তন আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন।

আপনার ক্যারিয়ারকে আরেকটু ভালোর দিকে নেয়ার ক্ষেত্রে এই লেখাটি যদি আপনাকে একটু হলেও সাহায্য করতে পারে – তবেই আমাদের প্রচেষ্টা সফল বলে ধরে নেব।

লেখাটির ব্যাপারে আপনার যে কোনও মতামত আমাদের কমেন্ট করে জানান। আপনার প্রতিটি মতামতই আমাদের কাছে অমূল্য

“ইগো প্রবলেম” কি? সমাধান কি?

“ইগো” শব্দটির সাথে আমরা কমবেশি সবাই পরিচিত। শব্দটি মূলত ইংরেজী হলেও বাংলায় মোটামুটি প্রচলিত হয়ে গেছে। কেউ যদি জীবনের যে কোন কাজে \nকারও তুলনায় এগিয়ে যায়, সেটা হতে পারে ক্লাসে প্রথম হওয়া; হতে পারে ব্যবসায় বা চাকরীতে তুলনামূলক বেশি সফলতা পাওয়া। এসব ব্যাপারে যদি কারও মনে বিন্দুমাত্র হিংসা জন্ম নেয় তাহলে সাধারন ভাবে ধরে নেয়া হয় তার “ইগো প্রবলেম আছে।”

তবে এই সমস্যাকে ইগো’র চেয়ে ঈর্ষা বা হিংসা বলা ভাল। ঈর্ষা ইগোর একটি অংশ হলেও ইগোর ব্যপ্তি আরও বড়।এটা আপনার সম্ভাবনাময় জীবন ও ক্যারিয়ারকে পুরোপুরি শেষ করে দিতে পারে। তাই ইগো কি, তা ভাল করে জানা, আর তা থেকে বের হয়ে আসাটা ব্যক্তিগত এবং পেশাগত জীবনের জন্য খুবই জরুরী।

তাই আজ চলুন বেস্ট সেলার লেখক রায়ান হলিডে’র বিখ্যাত বই “Ego is the Enemy” এর আলোকে জেনে নেয়া যাক কেন ইগো আপনার উন্নতির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় শত্রু আর কিভাবেই বা এর থেকে বাঁচা যায়।

ইগো আসলে কি?

ইগোর অনেকগুলো প্রচলিত সংজ্ঞা আছে, তবে রায়ান হলিডের মতে ইগো হচ্ছে “নিজের বড়ত্বের প্রতি একটি অস্বাভাবিক বিশ্বাস। যার সাথে মিশে থাকে অতি অহঙ্কার এবং আত্মকেন্দ্রিক ও স্বার্থপর উচ্চাকাঙ্খা।”

লেখকের মতে, আমরা সবাই জানি ইগো একটি খারাপ জিনিস, এবং এটা আমাদের সবার মাঝেই কিছু না কিছু মাত্রায় আছে। আর সেজন্যই এটা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বও আমাদের। ইগো কিভাবে আপনার জীবনকে খারাপ বা ভালো দিকে নিয়ে যেতে পারে, বইয়ে লেখক তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

নিজের প্রতি অস্বাভাবিক ও অবাস্তব উঁচু ধারনা একজন মানুষের সাফল্যের যাত্রাকে পুরোপুরি থামিয়ে দিতে পারে। ইগো আসলে মানুষের মাঝে বাস করা ছোট্ট শয়তানের মত যে একজন মানুষ আসলে যতটা বড়, তাকে তারচেয়েও অনেক বড় হিসেবে ভাবতে শেখায়।

আপনার মাঝে বড় হবার সম্ভাবনা আছে, এবং কাজ করলে আপনি আসলেই অনেক বড় হতে পারবেন – এটা আত্মবিশ্বাস। কিন্তু আত্মবিশ্বাসী মানুষ এটাও জানে যে তার বর্তমান অবস্থা কি। সে যতটা বড় হতে চায়, ততটা বড় হতে হলে তাকে আরও কতটা কাজ করতে হবে সেটা সে খুব ভালকরে জানে।

যার মাঝে ইগো আছে, সে সত্যিকার বড় হওয়ার আগেই নিজেকে বড় ভাবতে শুরু করে। তার এই ভাবনা তাকে সত্যিকার বড় হওয়ার পথে এগুতে বাধা দেয়। কারনটা খুব স্বাভাবিক, আপনি যদি আগেই ভেবে বসে থাকেন আপনি ইতোমধ্যেই অনেক বড় কিছু করে ফেলেছেন, তবে আর সত্যিকার বড় কিছু করার জন্য কষ্ট করার দরকার মনে করবেন না।

ইগো আমাদের সাথে এই খেলাটাই খেলে। ইগো সম্পন্ন মানুষ তার মিথ্যা অহঙ্কার নিয়ে বসে থাকে, আর অন্যরা তাকে টপকে সত্যিকারের বড় হয়ে ওঠে।

আবার অনেক মানুষ কিছুটা সফলতা পেয়েই নিজেকে অনেক বড় ভাবতে শুরু করে। তারা মনে করে তাদের আর প্রমান করার কিছু নেই। এই কারনে তারা সামনে চলা আর পরিশ্রম করা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু তারা বুঝতেও পারে না যে এই ভুল ধারনাটি না থাকলে তারা আরও অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারত। অথবা বুঝলেও সেই সর্বনাশা ইগোর কারনে স্বীকার করতে চায় না।

একজন মানুষের মধ্যে যে প্রবল ইগো সমস্যা আছে তার একটি প্রধান লক্ষণ তারা ভুল করেও ভুল স্বীকার করতে চায় না। অনেক সময়ে ভুল বুঝতে পারলেও তারা তা স্বীকার করে না। সেই অস্বীকার যেমন অন্যদের কাছে করে, তেমনি তাদের নিজেদের কাছেও করে। আর ভুল স্বীকার না করলে সেই ভুল শোধরানোও অসম্ভব। একজন ইগো সম্পন্ন মানুষের যদি ইংরেজী গ্রামারে সমস্যা থাকে, এবং আপনি যদি তাকে সেটা ধরিয়ে দিতে যান, তাহলে সে আপনারই ওপর রাগ করবে। পরীক্ষায় নম্বর কম পেলে সেটা হবে শিক্ষকের দোষ, কিন্তু নিজে নিজের জ্ঞান বাড়ানোর কোনও চেষ্টা সে করবে না।

ইগো সম্পন্ন মানুষদের আরও একটি ব্যাপার, তারা নিজেরা যতটুকু জানে, তার তুলনায় বেশি জ্ঞানী বলে নিজেদের জাহির করতে চায়। সোজা বাংলায় এরা সব সময়ে “দুই লাইন বেশি বোঝে”। আপনি যদি মনে করেন তারা শুধু অন্যদেরকে বিশ্বাস করাতে চায় যে তারা বেশি জানে, তাহলে ভুল করবেন। এরা আসলে নিজেরাও বিশ্বাস করে যে তারা যে কোনও বিষয়ে সবচেয়ে বেশি জ্ঞানী। কোনও একটি বিষয়ে অল্প একটু ঘাঁটাঘাঁটি করেই তারা ধরে নেয় তারা আসলে অনেক কিছু জেনে ফেলেছে। আর এই বিশ্বাস তাদের যে কোনও ব্যাপারেই খুব বেশি জানার আগেই জ্ঞান অর্জনের প্রক্রিয়া থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।

একজন ইগো সম্পন্ন মানুষকে আপনি কখনও যুক্তি দিয়ে বোঝাতে পারবেন না। মানে, তারা কখনও তর্কে হার মানবে না। তারা যদি বোঝেও যে তাদের তুলনায় তাদের সামনের মানুষটির কথা বেশি যুক্তিসঙ্গত ও প্রমানিত, তারপরও তারা মানবে নাএকজন ইগোর দ্বারা অসুস্থ মানুষ ব্যর্থ হলেও সেই ব্যর্থতা থেকে না শিখে সব সময়ে পরিস্থিতি বা অন্য মানুষের ওপরে দোষ চাপাতে ভালবাসে। তারা কখনও নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে না তাদের কোথায় গলদ আছে। এর কারন তারা একটি ঘোরের মাঝে থাকে। তারা ভাবে, তাদের মধ্যে কোনও খুঁত নেই এবং সেই কারনে তারা কোনওভাবেই ভুল করতে পারে না।

এই লেখার প্রথম দিকে ঈর্ষা, পরনিন্দা, হিংসা ইত্যাদিকে ইগোর সাথে তুলনা করা হয়েছে। এগুলো আসলে ইগোর ফলাফল। একজন মানুষ যখন ইগোর শিকার হয় তখন সে অযথাই নিজেকে অন্যদের চেয়ে বড় ভাবতে শুরু করে। তারচেয়ে কেউ কোনও কিছুতে ভাল হলে সে কোনও না কোনও ভাবে তার ভুল ধরার চেষ্টা করে। যে কোনও ভাবে অন্য মানুষকে ছোট করার চেষ্টা করতে থাকে। আর এর ফলে সাধারন মানুষ তো তাকে পছন্দ করেই না, কাছের মানুষগুলোও দূরে চলে যায়। ইগো আসলে একটি মানসিক প্যারালাইসিস, যা আপনাকে শোয়া অবস্থায় বিশ্বাস করায় আপনি এখন উড়ছেন।

ইগো: আপনার সবথেকে বড় শক্র

“Ego is the enemy” বেস্ট সেলিং বইটিতে লেখক পুরাতন ও বর্তমান সময়ের বেশ কয়েকজন বিখ্যাত ব্যক্তির ওপর ইগো কিভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে – তা নিয়ে আলোচনা করেছেন। সেই আলোচনার পাশাপাশি তিনি ইগোকে পাশ কাটিয়ে কিভাবে জীবনে সত্যিকার সফলতার দেখা পাওয়া যায় – সেই উপায়ও বলে দিয়েছেন। আমরা অবশ্য এই রিভিউতে অতটা বিস্তারিত ভাবে সেইসব ব্যক্তিদের নিয়ে আলোচনা করব না। এখানে বইয়ের আলোকে আমরা আপনাকে ইগোর ব্যাপারে একটি স্পষ্ট ধারনা দেয়ার চেষ্টা করব, পাশাপাশি এর থেকে বের হয়ে আসার উপায়গুলো আপনাকে বিস্তারিত বলব।

বইটি ৩ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এই তিনটি ভাগে লেখক জীবনের প্রধান তিনটি পর্যায়ের কথা বলেছেন, যেগুলোকে ইগো সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করতে পারে। এই জায়গাগুলোতে ইগো নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি, এবং এটা আপনাকে আপনার সাফল্যের পথ থেকে ছিটকে দিতে পারে।

জীবনের গুরুত্বপূর্ণ এই তিনটি পর্যায় নিন্মরূপ:

  • লক্ষ্য ও আকাঙ্খা: জীবনের এই ভাগে মানুষ তার জীবনের লক্ষ্য নির্ধারন করে, এবং তা পূরণ করার আশায় বুক বাঁধে।
  • প্রাথমিক সাফল্য: জীবনের এই ভাগে মানুষ তার লক্ষ্য পূরণ করতে শুরু করে, এবং অন্যদের কাছ থেকে প্রশংসা পেতে শুরু করে।
  • ব্যর্থতা: এই ক্ষেত্রে মানুষের সার্বিক অবস্থা খারাপ হয়ে পড়ে এবং তার ওপরে আসা ব্যক্তিগত ও সামাজিক বিভিন্ন সমস্যা তাকে সামলাতে হয়।

বইয়ে লেখক এই তিনটি পর্যায়কে দারুন ভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। ব্যাখ্যার পাশাপাশি তিনি পাঠকদের শিখিয়েছেন কিভাবে সঠিক ভাবে নিজের লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। সেইসাথে শিখিয়েছেন কিভাবে নিজের ও অন্যদের সাথে সম্পর্ককে পরিচালনা করতে হবে। ব্যর্থতার মুখে পড়লে কিভাবে ঠান্ডা মাথায়, মেজাজ ও ব্যক্তিত্ব না হারিয়ে সেই সমস্যা থেকে বের হয়ে আসা যায় – বইয়ে লেখক খুব সুন্দর ভাবে ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

বইটিতে লেখক স্পষ্ট ভাবে আকাঙ্খা ও ইগোর মাঝে পার্থক্যকরে দেখিয়েছেন। তাঁর মতে যাদের মাঝে সত্যিকার লক্ষ্য ও আকাঙ্খার বদলে ইগো আছে, তারা আসলে কাজ করে না। কাজের চেয়ে তারা কথা বলেই বেশি সময় নষ্ট করে।

ইগো একজন মানুষকে বিশ্বাস করায় যে সে সব জানে। আকাঙ্খা একজন মানুষকে বিশ্বাস করায় যে শেখার কোনও শেষ নেই। একটু সাফল্য পেলেই মানুষ নিজেকে অনেক বড় কিছু ভাবতে শুরু করে যদি তার মাঝে ইগো বেশি পরিমানে থাকে। যতটা সাফল্য না সে অর্জন করেছে, তার শরীরী ভাষায় (body language) ও কথাবার্তায় তারচেয়ে বেশি অহঙ্কার দেখা যায়। আর এই দম্ভ বা অহঙ্কারই হয় তাদের পতনের কারন।

অন্যদিকে যারা নিজেদের ইগোকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, তারা সব সময়েই বিনয়ী হয়। তারা জানে যে তাদের শেখা ও উন্নতি করার এখনও অনেক সুযোগ রয়েছে। তারা অহঙ্কার না করে বরং বিনয়ের সাথে আরও সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে।

ব্যর্থ হলে একজন ইগো সম্পন্ন ব্যক্তি সব সময়ে অন্যকে দোষ দিয়ে পার পাওয়ার চেষ্টা করে। নিজের কোথায় ভুল বা কমতি ছিল – তা না দেখে নিজের কাছে ভাল থাকতে চায়। অন্যদিকে একজন সত্যিকার কাজের মানুষ লক্ষ্যপূরণের পথে তার ভুল গুলোকে সুন্দর ভাবে পর্যবেক্ষণ করে সেগুলো থেকে শিক্ষা নেয়।

আগেই বলেছি, এইসব সমস্যা থেকে বের হওয়ার পথও লেখক তাঁর বইতে বলে দিয়েছেন। চলুন জেনে নেয়া যাক ইগো থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়গুলো।

০১. ক্যানভাস পদ্ধতি:

লেখকের মতে এই পদ্ধতিতে ইগোকে জয় করতে গেলে আপনাকে স্বল্পমেয়াদী সাফল্যে খুব বেশি খুশি হওয়া বাদ দিতে হবে। তার বদলে দীর্ঘ মেয়াদে নিজের উন্নতি করার অভ্যাস করতে হবে। লেখক বলেন স্বল্প মেয়াদী সাফল্যের খুশি আসে আত্মতুষ্টি থেকে । আর এই আত্মতুষ্টি মানুষকে অনুপ্রাণিত করার বদলে অহেতুক গর্ব সৃষ্টি করে। নিজের লক্ষ্য অর্জনের ক্যানভাসটিকে সব সময়ে বড় করে দেখলে সামনে সব সময়ে একটির পর একটি নতুন লক্ষ্য আসতে থাকে। এতে করে সে নিজের বর্তমান জ্ঞান অথবা সাফল্যতেই খুব বেশি আত্মহারা হবে না। বরং সে নিজের উন্নতির আরও ক্ষেত্র দেখতে পাবে। মাঝে মাঝে লক্ষ্য পূরণের আনন্দের চেয়ে নতুন করে শিখতে পারার আনন্দকে গূরুত্ব দিলে ইগোর শিকার হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে আসে।

ধরুন আপনি ২৬ কিলোমিটার ম্যারাথনে অংশ নিতে চান। কিন্তু আপনি যদি ৫ কিলো দৌড়ানোর দক্ষতা অর্জন করেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে নিজেকে মহান দৌড়বিদ ভাবতে শুরু করেন – তাহলে কিন্তু আপনার ২৬ কিলো দৌড়ানোর দক্ষতা অর্জন করতে যে যা করতে হবে – তা আর করার ইচ্ছা থাকবে না। পুরো ক্যানভাসটিকে সব সময়ে মনের পর্দায় ভাসিয়ে রাখতে হবে। পাঁচ মাইলের দক্ষতা অর্জনের পরে আপনি যখন সামনে তাকিয়ে দেখবেন আরও ২১ মাইল বাকি, তখন আপনা আপনিই আরও ভাল করার তাড়া আসবে। এরপর সেই লক্ষ্য পূরণ হলে আপনার লক্ষ্য আরও বড় প্রতিযোগীতায় অংশ নেয়া। বড় মনের সফল মানুষেরা এই কারনেই সব সময়ে ‘নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে’ চান।

ক্যানভাস পদ্ধতি অনুসরন করে কাজ করতে হলে লেখক যে কোনও কাজের শুরুতে দুটি বিষয় মাথায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।

  • ১.১/ বিনীত থাকা: যে কোনও কাজ শুরু করার আগে ভেবে নিন আপনি নিজেকে যতটা ভাবছেন ততটা গুরুত্বপূর্ণ আপনি নন। আগে সফল হোন, তারপর নিজের গুরুত্ব নিয়ে চিন্তা করুন। লেখকের মতে, এই ভাবনা আপনাকে কাজের সময়ে বিনীত ও শান্ত থাকতে সাহায্য করবে। অনেক সময়েই দেখবেন গ্রেট গ্রেট খেলোয়াড় বিশ্বকাপ বা এই ধরনের কিছু জিতলে বলেন, যে তাদের আরও উন্নতি করার জায়গা আছে। সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড গড়া হলে অনেক সেরা খেলোয়াড় বলেন যে তারা রেকর্ডটিকে সামনে আরও উপরে নিয়ে যেতে চান। “নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে” চান। এর কারন তারা সব সময়ে সতর্ক থাকেন, তাদের অর্জন যেন তাদের ইগোর শিকার না বানায়। একটি বড় লক্ষ্য পূরণ হলে তাঁরা আরও বড় লক্ষ্যের দিকে চোখ দেন।
  • ১.২/ জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা মাথায় রাখা: কোনও কাজ শুরুর আগে সব সময়ে মাথায় রাখুন আপনি আসলে সেই কাজের বিষয়ে কতটা জানেন। একটি বিষয় মনে গেঁথে নিন, কোনও বিষয়েই জানার কোনও শেষ নেই, এবং আপনি এই কাজটির বিষয়েও সবকিছু জানেন না। কাজেই আপনার এই কাজ থেকেও নতুন অনেক কিছু শেখার আছে।শুধু নিজের সাফল্যে খুশি হওয়ার ক্ষেত্রের কথাই লেখক এই অধ্যায়ে বলেন নি। তিনি বলেন যে আমাদের শুধু একার সাফল্য নিয়েই ভাবলে চলবে না। ক্যানভাসটিকে আরও বড় করতে হলে, আমাদের অন্যদের নিয়েও ভাবতে হবে। একজন মানুষের সাফল্য বেশিরভাগ সময়েই অন্য আরও কিছু মানুষের সাফল্যের হাত ধরে আসে।ইগোকে পাশ কাটিয়ে সাফল্য পেতে গেলে আপনাকে এমন ভাবে কাজ করতে হবে যাতে করে অন্যদের জন্যও তাদের কাজ করাটা সহজ হয়ে যায়। নতুন কোথাও কাজ করতে গেলে প্রথমেই নিজের জ্ঞান ও মতামত জাহির করতে যাবেন না। আপনি ধরেই নিন যে যাদের সাথে আপনি কাজ করছেন, তারা আপনার চেয়ে বেশি জ্ঞান রাখেন। এতে করে আপনি নতুন অনেক কিছু শিখতে পারবেন। অন্যদের জ্ঞানটি নিজে অর্জন করার পর সেই অনুযায়ী কাজ করতে করতে যখন তারা আপনার ওপর আস্থা পাবেন, তখনই তারা আপনার মতামতকে গুরুত্ব দেবেন। কাজেই প্রথমে অন্যদের কাছ থেকে শেখার মানসিকতা নিয়ে কাজ শুরু করুন। এর ফলে ইগো আপনাকে পরাজিত করতে পারবে না।ক্যানভাস পদ্ধতিটি রপ্ত করার জন্য লেখক প্রাচীন স্টইকদের মত করে চিন্তা করার পরামর্শ দিয়েছেন। স্টইকরা নিজেদেরকে “জীবনের ছাত্র” হিসেবে দেখত। তারা জীবনভর শিখে যাওয়াকে তাদের জীবনের ব্রত হিসেবে পালন করত। আর এই মানসিকতা তাদের সব সময়ে বিনয়ী ও নিরহঙ্কার থাকতে অনুপ্রেরণা যোগাত। সেইসাথে তারা যা জানতে চায়, সেই বিষয়ে সেরা মানুষদের কাছ থেকে শিখতে পারত।
    লেখক এই অধ্যায়ের শেষ করেছেন দার্শনিক এপিকটেটাস এর একটি উক্তি দিয়ে – “যদি মানুষ মনে করে যে সে কোনও কিছু জেনে ফেলেছে, তাহলে তার পক্ষে তা (সত্যিকার অর্থে) জানা অসম্ভব।

০২. কাজ ও বিশ্বাস পদ্ধতি

লেখকের মতে এই পদ্ধতিতে ইগোকে জয় করতে গেলে প্রথমেই যা করতে হবে, তা হল কথা কম বলে কাজ শুরু করে দেয়া। ইগো সম্পন্ন মানুষরা নিজের বড়ত্বের ব্যাপারে কথা বলতে বেশি ভালবাসে। ভবিষ্যতে তারা কি করবে, না করবে, কত বড় বড় কাজ করবে – এইসব কথা বলে বেড়ায়, কিন্তু তেমন কোনও কাজ আসলে করে না। লেখকের মতে, এই বড় বড় কথা বলার অভ্যাস আসলে মানুষের ভেতর থেকে কাজ করার গতি নষ্ট করে ফেলে। নিজের পরিকল্পনার ব্যাপারে বড় বড় কথা বলতে বলতে নিজের মাঝে একটি অহেতুক আত্মতুষ্টি জন্ম নেয়। তাই কাজ করে সেই পর্যায়ে যাওয়ার আগ্রহ ততটা থাকে না। লেখকের মতে, এই বড় বড় কথা বলার বদলে মানুষ যদি সত্যিকার কাজে নামে, তাহলে কথা বলার শক্তিটি কাজ করার শক্তিতে পরিনত হয়।

কথা না বলে কাজ করার পাশাপাশি লেখক এই অধ্যায়ে অন্য যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন – তা হল বিশ্বাস। একটি সফল কাজ করতে গেলে নিজের প্রতি বিশ্বাস তো অবশ্যই থাকতে হবে। কিন্তু যদি একজন মানুষ সব রকমের ইগোকে জয় করে সাফল্য পেতে চায় সেক্ষেত্রে তাকে অন্যদের ওপরও বিশ্বাস রাখতে হবে।

লেখকের পর্যবেক্ষণ হল ইগো অনেক সময়ে মানুষকে অন্য মানুষের যোগ্যতার ওপর ভরসা করতে বাধা দেয়। অনেক সময়েই ইগোর কারনে মানুষ ভাবে যে, কিছু কাজ পৃথিবীতে তার থেকে ভাল আর কেউ করতে পারে না। এই ভাবনার কারনে কিছু মানুষ সব কাজ একাই করতে চায় এবং এর ফলে কাজের ক্ষেত্রে অন্যদের সাথে তার কোনও ভাল সম্পর্ক গড়ে ওঠে না। এছাড়াও অন্যদের সাথে নিয়ে না করার জন্য কাজটি আসলে যত ভাল হতে পারত – ততটা ভাল হয় না।

নিজের প্রতি অতিরিক্ত বিশ্বাসের কারনে মানুষ অন্যের ওপর বিশ্বাস রাখতে পারে না। এমনকি অন্যদের দক্ষতা সম্পর্কে জানার পরও ইগো সম্পন্ন মানুষ তাদের ওপর ভরসা করতে পারে না – কারন তারা ভাবে সেই কাজ তারা নিজেরা করলেই সবথেকে ভাল হবে।

এই অধ্যায়ে লেখক পাঠকদের বোঝাতে চান যে বিশ্বাস আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। একথা ঠিক যে ঢালাও ভাবে সবার ওপর বিশ্বাস করতে নেই। কিন্তু একটা মানুষকে ভাল করে লক্ষ্য করলে এবং তার কাজ দেখলে তার সততা ও দক্ষতা সম্পর্কে বেশ ভাল ধারনা পাওয়া যায়। আপনি একজন অসুস্থ ইগো সম্পন্ন মানুষের সাথে দীর্ঘদিন একসাথে কাজ করার পরও সে আপনার ওপর কোনও দায়িত্ব দেয়ার ভরসা পাবে না। কিন্তু এই কারনে অনেক বড় বড় সম্ভাবনাময় প্রজেক্ট যতটা সাফল্য পাওয়ার উচি‌ৎ – ততটা পায় না।

লেখক বলেন, বিশ্বাস একটি কাজের গতিকে অনেক গুণে বাড়িয়ে দেয়। একটি ব্যবসায়ের সাফল্যের গতি সবথেকে বেশি থাকে যখন মালিক, কর্মচারী, অংশীদাররা একে অপরের ওপর ভরসা করে। একটি প্রজেক্টের কাজ যখন বেশ কয়েকজনের মাঝে ভাগ হয়ে যায় তাহলে একটি কাজের সময়েই বেশ কয়েকটি কাজ একসাথে হয়ে যায়। একটি প্রজেক্টে যদি চারটি ধাপের কাজ থাকে, এবং অফিসে লোকও হয় চারজন। তাদের প্রত্যেকেরই কাজের বিষয়ে ভাল জ্ঞান ও দক্ষতা আছে। কিন্তু এদের মধ্যে একজন আছে যার ইগোর সমস্যা। সে অন্যদের কাজ করতে না দিয়ে নিজেই পুরো প্রজেক্টটি নামাবে বলে ঠিক করল। এতে করে প্রজেক্ট এর চারটি ধাপ করতে তাকে এক এক করে চার ঘন্টা কাজ করতে হল।

কিন্তু এই কাজটি যদি চারজনে মিলে করত, তাহলে দেখা যেত যে এক ঘন্টায়ই কাজটি শেষ করা যায়। কিন্তু তার বদলে কাজটি করতে তিন ঘন্টা বেশি সময় নষ্ট হল, কারন একজন মানুষ তার ইগোর কারনে অন্যদের হাতে কাজের কোনও অংশই ছাড়তে চাইছিল না।

লেখকের মতে আপনি যদি ইগোকে জয় করে অন্যদের ওপর বিশ্বাস রাখেন, তাহলে কাজের গতি তো বাড়বেই, সেই সাথে অন্যরাও আপনাকে বিশ্বাস ও সম্মান করবে।

০৩. সাফল্য ব্যর্থতা গ্রহণ পদ্ধতি

যে কোনও কাজে অপ্রত্যাশিত ফলাফল আসলে একটি রাস্তার বাঁকের মত। এই বাঁকে আপনি নিজেকে আরও একটু ভাল করে নেয়ার সুযোগ পাবেন।

এই অপ্রত্যাশিত ফলাফল ভাল খারাপ – দু’টোই হতে পারে। আর এই সময়ে ইগো তার বড় চালটা চালে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে ইগোর কারনে আপনি সঠিক পথ থেকে সরে যেতে পারেন। ইগো খারাপ ও ভাল – দুই সময়েই আপনাকে শেষ করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে।

আপনি যখন কোনও খারাপ বা ভুল কিছু করেন, আপনার ইগো আপনাকে সেই ভুল স্বীকার করে সেটা না শুধরে, সেই দায় অন্যের ওপর চাপাতে উ‌ৎসাহিত করে। এই পরিস্থিতিতে ইগোর শিকার হলে আপনি কখনওই সেই খারাপ অবস্থার জাল কেটে বের হতে পারবেন না।

আবার যখন আপনি ভাল কিছু করেন অথবা আশার থেকে বেশি সাফল্য পান, তখন আপনার ইগো সেই সাফল্যের জন্য অন্যদের প্রাপ্য কৃতিত্ব দিতে চায়না। ইগো আপনাকে বোঝায় যে কাজটির পুরো কৃতিত্ব আপনার একার। এই ধরনের ইগোর কারনে সাফল্য ও সম্মান ধরে রাখাটা খুব কঠিন হয়ে যায়।

লেখক এই দুই পরিস্থিতিতেই আপনাকে এমন আচরন করার পরামর্শ দেন যাতে করে ইগো আপনার মনের নিয়ন্ত্রণ নিতে না পারে। – কিভাবে?

আপনি যখনই আশার থেকে বেশি ভাল বা খারাপ পরিস্থিতিতে পড়বেন, আপনাকে ভাবতে হবে এটা আপনার নিজের উন্নতি করার জন্য সবচেয়ে ভাল সময়।

আপনি যদি চরম ভাবে ব্যর্থ হন, তবে আপনাকে ভেবে দেখতে হবে সেই ব্যর্থতার পেছনে আপনার নিজের কি কি ভুল ছিল, যেগুলো শুধরে আপনি সেই ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠতে পারবেন।

আবার যদি আশার চেয়ে বেশি সাফল্য পেয়ে যান, তবে ভাবুন, যদি কাজটি সামনে আরও ভালভাবে করা যায় তবে আপনি আরও বেশি সাফল্য পাবেন। যারা আপনার কাজের সময়ে বিভিন্ন ভাবে সমর্থন দিয়েছেন, সব সময়ে তাদের কৃতজ্ঞতা জানান। তাদেরকে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ দিন। আপনার এই সাফল্যের পেছনে কার কি অবদান আছে তা ভালকরে মনে করুন। প্রয়োজন হলে কাগজ-কলম নিয়ে বসে যান।

আপনার নিজের ভেতরে অহঙ্কার আর হতাশাকে কখনওই জায়গা দেবেন না। হতাশা একটি দুর্বলতা, যা থেকে অহঙ্কারের মত রোগ দেখা দেয়, আপনার নিজের ভুল গুলোকে মেনে নিতে বাধা দেয়। আর আপনি নিজেও জানেন অহঙ্কার মানুষের পতন ডেকে আনে। সাফল্যে আত্মহারা হয়ে গেলেও সেই একই ঘটনা ঘটে। মনে রাখবেন, একা কেউ সফল হতে পারে না। আপনি যদি খুব ভাল একটি পন্য আবিষ্কার করেন এবং তা থেকে আপনার দারুন লাভ হতে থাকে – মনে রাখবেন, মানুষ যদি আপনার পন্য না কিনত, তাহলে আপনার লাভ হত না।

প্রতিটি নতুন আইডিয়া আসলে আলাদা আলাদা জ্ঞানের মিশ্রণ। আপনি হয়তো বুঝতেও পারেন না, আপনার ‘ইউনিক’ আইডিয়াটি হয়তো দশটি বই পড়ার পরে এসে গেছে। আপনার অবচেতনে দশটি বইয়ের জ্ঞানগুলো মিলেমিশে একটি নতুন জ্ঞানের জন্ম দিয়েছে।

কাজেই সব সময়ে বিনীত থাকুন। ইগোকে কখনওই আপনার ওপর প্রভুত্ব করতে দেবেন না। আপনার যদি নিজেকে পৃথিবীর প্রভু মনে হয়, তবে মনে রাখবেন, আপনি পৃথিবীর প্রভু নন, ইগো আপনার প্রভু হয়ে বসায় আপনার মাথায় এই উদ্ভট ভাবনা এসেছে।

পরিশিষ্ট:

আশা করা যায় এই বুক রিভিউটি থেকে আপনি ইগো কি এবং কিভাবে এর হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, সেই ব্যাপারে একটি ভাল ধারনা পেয়েছেন। অনেকের মাঝে ইগো থাকলেও তারা নিজের এই অসুস্থতাটি ধরতে পারেনা, যার কারন তাদের সেই ইগো। আপনার যদি এমন মনে হয় যে আপনার মাঝেও এই ইগোর কিছুটা হলেও আছে, তবে এখনই সময় রায়ান হলিডে’র পরামর্শগুলো কাজে লাগানোর।

লেখকের সাথে আমাদেরও আশা বইটির জ্ঞান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ইগোর ফাঁদ চিনে নিয়ে তা থেকে পাঠকেরা মুক্তি পাবেন। এক কথায়, শুধুমাত্র একটু দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তন করলেই জীবন অনেক সহজ হয়ে যায়, ইগো শুধু আপনার জীবনকে জটিল থেকে জটিলই করবে।

যদি আপনার মনে হয় যে আপনার কোনও কাছের মানুষ ইগোর সমস্যায় ভুগছেন এবং তিনি এই লেখাটি থেকে উপকৃত হবেন, তবে লেখাটি তাদের সাথে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন। ইগো নামক শত্রুর হাত থেকে নিজে বাঁচুন, অন্যদেরও বাঁচতে সাহায্য করুন।

(সংগ্রহিত)

যক্ষা বা Tuberculosis

যক্ষা কনটেন্টটিতে যক্ষা কী, কীভাবে ছড়ায়, রোগের লক্ষণ, এইডস ও যক্ষা, ওষুধ, প্রতিরোধক যক্ষা, কখন ডাক্তার দেখাতে হবে, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, চিকিৎসা, প্রতিরোধ সর্ম্পকে বর্ণনা করা হয়েছে।

টিউবারকিউলোসিস বা যক্ষা একটি সংক্রামক রোগ। যক্ষায় সংক্রমিত প্রতি ১০ জনের মধ্যে একজনের সক্রিয় যক্ষা হতে পারে। যক্ষায় মানুষের কিডনি, মেরুদন্ড অথবা মস্তিষ্কও আক্রান্ত হতে পারে।

যক্ষা কি? 

যক্ষা একটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ যা প্রাথমিকভাবে ফুসফুসকে আক্রান্ত করে।  
যক্ষা রোগের জীবাণু কিভাবে ছড়ায়?

বাতাসের মাধ্যমে যক্ষা রোগের জীবাণু ছড়ায়। যক্ষা রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে রোগের জীবাণু  বাতাসে গিয়ে মিশে এবং রোগের সংক্রমণ ঘটায়। 

যক্ষা হয়েছে কি করে বুঝবেন? 

যক্ষার লক্ষণ ও উপসর্গগুলো হলো :

সাধারণত লক্ষণ-

  •     অস্বাভাবিকভাবে ওজন হ্রাস পাওয়া
  •     অবসাদ অনুভব করা
  •     জ্বর
  •     রাতে ঘাম হওয়া
  •     কাপুনী
  •     ক্ষুধা মন্দা

অন্যান্য লক্ষণ-

  •     তিন সপ্তাহ বা এর অধিক সময় ধরে  কাশি
  •     কাশির সাথে রক্ত যাওয়া
  •     বুকে ব্যথা অথবা শ্বাস নেয়ার সময় ও কাশির সময় ব্যথা হওয়া

যক্ষার সংক্রমণ (TB Infection) এবং সক্রিয় যক্ষা(Active TB)

শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ফুসফুসে যক্ষার জীবাণু প্রবেশ করলে নিচের যে কোনটি হতে পারে :

    রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কারণে যক্ষার জীবাণু ধ্বংস  হয়ে যেতে পারে।

    জীবাণুগুলো ফুসফুসে স্থায়ীভাবে আরও দ্বিগুণ হয়ে থেকে যেতে পারে। এর ফলে যক্ষার সংক্রমণ হতে পারে তবে এর উপসর্গগুলো বোঝা যায় না এবং রোগ ছড়ায় না।

    রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হলে যক্ষার জীবাণু ফুসফুসে এবং শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে যেতে পারে এবং তা রোগ প্রতিরোধী কোষগুলো ধ্বংস করে দিতে পারে।

    বছরের পর বছর ধরে যক্ষার জীবাণু শরীরে থাকলে পরবর্তীতে এটি সক্রিয় যক্ষায় রূপ নিতে পারে। সাধারণত বয়স, ঔষধ সেবন, অপুষ্টি, কেমোথেরাপী, মদপান ইত্যাদির জন্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে সক্রিয় যক্ষা হতে পারে। সংক্রমণের প্রথম দুই বছরের মধ্যে যক্ষা হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।

এইডস এবং যক্ষা (AIDS and TB)

এইচআইভি (এইডস) এর সংক্রমণের ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই দুর্বল হয়ে যায়। এর ফলে যক্ষার জীবাণুকে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। এর ফলে এইচআইভি সংক্রমিত লোকদের মধ্যে সক্রিয় যক্ষা হবার সম্ভাবনা খুব বেশি থাকে। এমনকি এইডস এ আক্রান্ত ব্যক্তিদের মৃত্যুর একটি প্রধান কারণ হলো যক্ষা।

ঔষধ প্রতিরোধক যক্ষা (Drug Resistant TB)

যখন কোন এ্যান্টিবায়োটিক যক্ষা রোগের সকল জীবাণু ধ্বংস করতে ব্যর্থ হয় তখনই ঔষধ প্রতিরোধক যক্ষার সূত্রপাত হয়।

ঔষধ প্রতিরোধক যক্ষার মূল কারণগুলো হলো :

  •     পর্যাপ্ত চিকিৎসা গ্রহণ না করা
  •     ভুল ঔষধ সেবন
  •     চিকিৎসার কোর্স সম্পূর্ণ না করা

কখন ডাক্তার দেখাবেন? 

যক্ষার লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা দেয়ার সাথে সাথে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

কোথায় চিকিৎসা করাবেন? 

বাংলাদেশের সকল- 

  •     উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
  •     জেলা সদর হাসপাতাল
  •     বক্ষব্যাধি ক্লিনিক/হাসপাতাল, নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র
  •               এনজিও ক্লিনিক ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সমূহে বিনামূল্যে কফ পরীক্ষা, রোগ নির্ণয়সহ যক্ষার চিকিৎসা করা হয় ও ঔষধ দেয়া হয়।

 কি ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে? 

সাধারণ পরীক্ষা-

  •     ত্বকের পরীক্ষা
  •     রক্তের পরীক্ষা
  •     কফ পরীক্ষা

অন্যান্য পরীক্ষা-

  •     বুকের এক্স-রে পরীক্ষা অথবা সিটি স্ক্যান
  •     কালচার টেস্ট

পরীক্ষার ফল নেতিবাচক হলেও অনেক সময় যক্ষার সংক্রমণ হতে পারে। যেমন :

    যক্ষার সংক্রমণের ৮-১০ সপ্তাহ পরে তা ত্বকের পরীক্ষায় ধরা পড়ে। তার আগে পরীক্ষা করলে ধরা নাও পড়তে পারে

    এইডস এর মতো কোন রোগের কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে  অনেকসময় পরীক্ষায় যক্ষা রোগ ধরা পড়ে না। এছাড়া এইডস এবং যক্ষা রোগের লক্ষণ ও উপসর্গ গুলো প্রায় এক রকম হওয়ায় এইডস রোগীদের যক্ষা রোগ নির্ণয়ের বিষয়টি জটিল হয়ে থাকে।

    হামের  টিকা নিলে এগুলোতে অনেক সময় জীবন্ত জীবাণু (Live virus) থাকে, এর জন্য ত্বক পরীক্ষায় যক্ষা ধরা নাও পড়তে পারে।

    শরীরে যক্ষা রোগের জীবাণু বেশী মাত্রায় ছেয়ে গেলে (Overwheliming TB disease) ত্বকের পরীক্ষায় রোগের জীবাণু ধরা নাও পড়তে পারে

    অনেক সময় সঠিকভাবে পরীক্ষা না করলেও এতে যক্ষা রোগের জীবাণু ধরা পড়ে না।

কি ধরণের চিকিৎসা আছে?

ডটস পদ্ধতিতে অর্থাৎ স্বল্পমেয়াদী, সরাসরি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে যক্ষা রোগের চিকিৎসা করা হয়। এজন্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রোগের ধরণ, মাত্রা এবং রুগীর বয়স অনুসারে ঔষধের কোর্স সম্পূর্ণ করতে হবে। যক্ষার চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে:

  •     এন্টিবায়োটিক সেবন। সাধারণত ৬-৯ মাস ব্যাপী এন্টিবায়োটিক ঔষধ সেবন করতে হবে
  •     শিশুদের ক্ষেত্রে Streptomycin সেবন
  •     গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে Isoniazid Rifampin, এবং Ethambutol সেবন

যক্ষা রোগ কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়?

  •     জন্মের পর পর প্রত্যেক শিশুকে বিসিজি টিকা দেয়া
  •     হাঁচি-কাশি দেয়ার সময় রুমাল ব্যবহার করা
  •     যেখানে সেখানে থুথু না ফেলা
  •     রোগীর কফ থুথু নির্দিষ্ট পাত্রে ফেলে তা মাটিতে পুঁতে ফেলা

সচরাচর জিজ্ঞাসা 

প্রশ্ন. ১. যক্ষা কেন হয় ? 

উত্তর. মাইক্রোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস নামক এক ধরণের জীবাণুর সংক্রমণের মাধ্যমে যক্ষা হয়।

প্রশ্ন.২. যক্ষা কয় ধরনের হয়ে থাকে?

উত্তর. যক্ষা দুই ধরণের হয় :

    সুপ্ত বা Latcut TB : এক্ষেত্রে যক্ষার সংক্রমণ হলেও জীবাণুগুলো সক্রিয় থাকে না এবং সমস্যার কোন লক্ষণ দেখা যায় না।

    সক্রিয় বা Active TB : এক্ষেত্রে  আক্রান্ত ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং তার থেকে অন্যরাও আক্রান্ত হতে পারে।

প্রশ্ন. ৩. কাদের যক্ষা হবার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে ? 

উত্তর. যাদের যক্ষা হবার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে তারা হলেন-

  •     রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাদের কম
  •     যক্ষায় সংক্রমিত ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসা ব্যক্তি
  •     বয়স্ক ব্যক্তি
  •     অপুষ্টি
  •     যারা সুষম খাদ্য গ্রহণ করেন না
  •     যারা দীর্ঘদিন ধরে মাদক সেবন করছেন

প্রশ্ন. ৪. যক্ষার কারণে কি ধরণের জটিলতা দেখা দিতে পারে ? 

উত্তর. যক্ষার কারণে নিচের জটিলতাগুলো দেখা দিতে পারে যেমন :

  •     ফুসফুসের ক্ষতি
  •     অস্থিসন্ধি ব্যথা, ক্ষয়
  •     মেনিনজাইটিস (মস্তিষ্ক এবং স্নায়ু সংক্রমিত হলে)
  •     মিলিয়ারি টিবি (Miliary TB) (সমস্ত শরীরে সংক্রমিত হলে )

প্রশ্ন.৫. এ্যান্টিবায়োটিক সেবনের ফলে কি ধরণের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে?

উত্তর. এ্যান্টিবায়োটিক সেবনের ফলে নিম্নের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া গুলো দেখা দিতে পারে:

  •     বমি বমি ভাব অথবা বমি
  •     ক্ষুধামন্দা
  •     ত্বক হলদে হয়ে যাওয়া
  •     গাঢ় রঙয়ের প্রস্রাব
  •     কোন কারণ ছাড়াই তিন দিনের অধিক জ্বর থাকা
  •     পেট যন্ত্রণা
  •     চোখে অস্পষ্ট দেখা

এ্যান্টিবায়োটিক সেবন করলে যদি উপরোক্ত লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা দেয় তাহলে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

প্রশ্ন.৬. যক্ষা রোগ কি ভাল হয়?

উত্তর. নিয়মিত, সঠিকমাত্রায় ও পূর্ণ মেয়াদের চিকিৎসায় যক্ষা রোগ ভাল হয়।

​ফ্যাটি লিভার এবং সমাধান

আমরা সকলেই জানি যে লিভার দেহের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। যার কাজ হলো দেহে প্রবেশ করা টক্সিন বা বিষ বর্জ্যে রূপান্তরিত করা। যে বর্জ্য পরে প্রস্রাব ও পায়খানার সঙ্গে বের হয়ে আসে। আর এটা খুবই জরুরি একটি কাজ। কেননা খাদ্যের সঙ্গে আমাদের দেহে প্রচুর পরিমাণে টক্সিন প্রবেশ করে।
তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লিভারের কর্মক্ষমতা কমে আসতে থাকে। অথবা কোনো ভাইরাস বা রোগের কারণেও লিভারের কার্যক্ষমতা কমে আসে। ফলে দেহ থেকে যথাযথভাবে টক্সিন বের করে দেওয়ায় ও অক্ষম হয়ে পড়ে সেটি। তখন এসব ক্ষতিকর টক্সিন চর্বি হিসেবে পেটে জমা হয়। লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমা হলে ফ্যাটি লিভার রোগ সৃষ্টি হতে পারে। লিভার প্রাকৃতিকভাবেই একটি চর্বিবহুল অঙ্গ। আর লিভারে সব সময়ই কিছু না কিছু চর্বি থাকা উচিত। ফ্যাটি লিভার রোগ হয় তখনই যখন লিভারের চর্বি এর নিজের মোট ওজনের ৫% থেকে ১০% বেশি হয়। যখনই আপনার লিভার টক্সিন নিঃসরণে ভালো মতো কাজ করবে না তখন আপনি ওজন কমানোর জন্য যতই কম ক্যালরি খান না কেন বা যত বেশিই শরীরচর্চা করেন না তাতে কোনো কাজ হবে না।
ফ্যাটি লিভার কথাটা প্রায় সকলেই শুনেছেন। অনেকেই ভাবেন কেবলমাত্র মদ্যপান করলেই ফ্যাটি লিভারের সমস্যা দেখা দিতে পারে। কিন্তু চিকিত্সকরা জানাচ্ছেন, মদ্যপান না করলেও ফ্যাটি লিভারের সমস্যা দেখা দিতে পারে। যাকে বলা হয় নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার। মূলত অস্বস্থ্যকর ডায়েট, অনিয়মিত লাইফস্টাইলের কারণে ফ্যাটি লিভারের সমস্যা দেখা দেয়। দেখে নিন কী কী লক্ষণ দেখে বুঝবেন আপনার ফ্যাটি লিভারের সমস্যা হয়ে থাকতে পারে।
ফ্যাটি লিভার লিভারের একটি খুব সাধারণ রোগ। এ রোগের কথা প্রথম শোনা যায় ১৯৬২ সালে। তবে ১৯৮০ সালে অধ্যাপক লুডউইগ প্রথম এ রোগটিকে ভালোভাবে ব্যাখ্যা করেন। অনেকেই ভাবেন কেবলমাত্র মদ্যপান করলেই ফ্যাটি লিভারের সমস্যা দেখা দিতে পারে। কিন্তু মদ্যপান না করলেও ফ্যাটি লিভারের সমস্যা দেখা দিতে পারে। যাকে বলা হয় নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার। মূলত অস্বাস্থ্যকর ডায়েট, অনিয়মিত লাইফস্টাইলের কারণে ফ্যাটি লিভারের সমস্যা দেখা দেয়। জেনে নিন কী কী লক্ষণ দেখে বুঝবেন আপনার ফ্যাটি লিভারের সমস্যা আছে কি না।
লিভারই মূলত চর্বি হজমের কাজ করে। আর যখন এটি ঠিক মতো কাজ করবে না তখন চর্বিগুলো অন্ত্র থেকে পিত্ত হয়ে ফের লিভারে এসে জমা হবে।
আসুন জেনে নেওয়া যাক লিভার ভালো না থাকার শীর্ষ লক্ষণগুলো কী কী-
১. শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়া
লিভার যেহেতু চর্বি হজমের জন্য প্রধানত দায়ী সেহেতু এটি যথাযথভাবে কাজ না করলে দেহে চর্বি জমতে থাকে। যার ফলে ব্যাখ্যাতীতভাবে অকারণে ওজন বাড়তে থাকে।

২. অ্যালার্জি বেড়ে যাওয়া

লিভার ভালো থাকলে তা এমন সব অ্যান্টিবডি তৈরি করে যেগুলো অ্যালার্জেন বা অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী উপাদানগুলোকে আক্রমণ করে ধ্বংস করে। কিন্তু লিভারের কার্যক্ষমতা কমে গেলে দেহ ওই অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী উপাদানগুলোকে জমা করতে থাকে। এর প্রতিক্রিয়ায় আবার দেহ হিস্টামিন উৎপাদন করতে থাকে যা অ্যালার্জি সৃষ্টিকারক উপাদানগুলো দূর করতে কাজ করে। কিন্তু অতিরিক্ত হিস্টামিন উৎপাদন হলে আবার চুলকানি, ঝিমুনি এবং মাথা ব্যথা হতে পারে।

৩. ক্রমাগত অবসাদ সৃষ্টি হওয়া
দেহে টক্সিন জমা হলে তা মাংসপেশির টিস্যুর বিপাকীয় প্রক্রিয়ায় বাধার সৃষ্টি করে। যা থেকে আবার ব্যাথা এবং শারীরিক অবসাদও সৃষ্টি হতে পারে। ক্লান্তি থেকে মেজাজ খিটখিটে হওয়া, মানসিক অবসাদ এবং ক্ষোভের বিস্ফোরণের মতো সমস্যাও তৈরি হতে পারে। লিভার ভালো না থাকার শীর্ষ লক্ষণগুলোর একটি এটি। দেহে অতি উচ্চ মাত্রায় টক্সিন বা বিষ জমা হওয়ারও একটি লক্ষণ এটি।

৪. শরীর থেকে অতিরিক্ত ঘাম বের হওয়া

বেশি বেশি কাজ করার কারণে লিভারের কার্যক্ষমতা কমে যায় এবং সেটি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। তখন লিভার দেহের অন্যান্য অঙ্গেও তাপ ছড়িয়ে দেয় এবং অতিরিক্ত ঘাম বের করার মাধ্যমে লিভার নিজেকে ঠাণ্ডা করে।

৫. মুখে ব্রণ উঠা

লিভারে জমা হওয়া টক্সিন দেহে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে যারে। যা থেকে ত্বকে ব্রণ সৃষ্টি হতে পারে। কার্যক্ষমতা হারানো লিভারের কারণে সৃষ্ট ত্বকের এই সমস্যা ততক্ষণ পর্যন্ত যাবে না যতক্ষণ না পুনরায় লিভারের কার্যক্ষমতার উন্নতি ঘটানো হবে।

৬. দুর্গন্ধযুক্ত নিঃশ্বাস বের হওয়া

মুখের স্বাস্থ্য ভালো থাকার পরেও যদি আপনার নিঃশ্বাসের সঙ্গে দুর্গন্ধ বের হয় তাহলে বুঝবেন যে আপনার লিভারের কোনো সমস্যা আছে। লিভারের স্বাস্থ্য ভালো না থাকার একটি লক্ষণ এটি।

৭. পেটে ব্যথা করা

পেট খারাপ না হলেও কারণে অকারণে প্রায়ই পেটে ব্যথা। এই সমস্যা ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ।

৮. বংশগত ভাবে হওয়া

ফ্যাটি লিভারের সমস্যা অনেক ক্ষেত্রে বংশগত হতে পারে। আপনার ফ্যাটি লিভারের কোনও লক্ষণ না দেখা দিলেও পরিবারে বিশেষ বাবা বা ঠাকুর্দার এই সমস্যা থেকে থাকলে পরীক্ষা করিয়ে নিন।

৯. জন্ডিস

চোখের সাদা অংশে হলদেটে ভাব, ত্বক হলুদ হয়ে আসা জন্ডিসের লক্ষণ। এই অবস্থায় এক মুহূর্তও দেরি না করে লিভার পরীক্ষা করান।

১০. প্রস্রাবের রং পরিবর্তন হওয়া

যদি প্রস্রাবের রং অত্যধিক মাত্রায় গাঢ় হলুদ হয় তাহলে আপনার ফ্যাটি লিভারের সমস্যা হয়ে থাকতে পারে।

১১. ত্বক শুস্ক হয়ে যাওয়া

ফ্যাটি লিভারের কারণে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়, ছোপ ধরে, গলার কাছের ত্বকের স্বাভাবিক রং নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

ফ্যাটি লিভার রোগের চিকিৎসা

ফ্যাটি লিভার রোগ সারানো সম্ভব শুধুমাত্র যথাযথ স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে। ড্যান্ডেলিয়ন বা ডেইজি জাতীয় হলুদ ফুলের গাছের মূল, কলা, মিষ্টি আলু, যকৃত এবং আদা ফ্যাটি লিভার রোগ দূরীকরণে বেশ কার্যকর।  নিচে কিছু পদ্ধতি দেয়া হলো-

১. আপেল ভিনিগার

ফ্যাটি লিভারের সমস্যায় মোক্ষম ওষুধ এটি। হাল্কা গরম পানিতে কয়েক ফোঁটা আপেল সিডার ভিনিগার মিশিয়ে দিনে দু’বার খাবার আগে খান। চাইলে মধুও মিশিয়ে খেতে পারেন। কয়েক মাস খেয়ে দেখুন তো কাজ হয় কি না।

২. পাতিলেবু

এমনিই প্রতিদিন লেবুর পানি খাওয়া শরীরের পক্ষে ভাল। বিশেষ করে যাঁদের শরীরে ফ্যাট বেশি। তাছাড়া লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি রয়েছে। লিভারের জন্য যা খুবই ভাল। অর্ধেক লেবু কেটে পানিতে মিশিয়ে খান। টানা কয়েক সপ্তাহ খেয়ে দেখুন লিভারের ফ্যাট কমতে বাধ্য।

৩. হলুদ 

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট তো রয়েছেই। সঙ্গে ফ্যাটি লিভারের জন্যও খুব ভাল। ২০০৮ সালে চীনের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ফ্যাটি লিভার কমাতে হলুদের জুড়ি নেই। কারণ, হলুদ ফ্যাট হজম করতে সাহায্য করে। ১-২ গ্লাস পানিতে হাফ চামচ হলুদ গুঁড়া মিশিয়ে ভাল করে ফুটিয়ে নিন। দিনে দু’বার অন্তত খান। দু’সপ্তাহ পরই হাতেনাতে ফল পাবেন।

৪. গ্রিন টি

এখন তো সর্বত্রই গ্রিন টি পাওয়া যায়। দিনে দু’বার গ্রিন টি খাওয়ার অভ্যাস করুন। শরীর শুধু সতেজই থাকবে না, লিভারও ভাল থাকবে।

৫. আদা

ভাল করে আদাটা গ্রেড করে নিন। মোটামুটি এক চামচ মতো গ্রেড আদা হালকা গরম জলে মিশিয়ে খান। সপ্তাহ দু’য়েক খেলেই বদলটা বুঝতে পারবেন। মাথায় রাখবেন, অতিরিক্ত ফ্যাট থেকে লিভারকে বাঁচাতে আদা খুবই কার্যকরী।

৬. যষ্টিমধু

এক কাপ গরম পানিতে হাফ চামচ যষ্টিমধু মিশিয়ে ৫-১০ মিনিট ফোটান। অল্প মধু মিশিয়ে দিনে দু’বার খান। 

​Chest/Respiratory Medicine Specialist Doctor List in Dhaka, Bangladesh

Dr. A.K.M. Mostofa Hossain
MBBS, DTCD, MD(Chest), FCP(USA)

Director

National Institute of Chest Diseases & Hospital Mohakhali, Dhaka

Chamber: Medinova Medical Services

Hosaf Tower, 6/9 Outer Circular Road, Malibag, Dhaka-1217, Bangladesh

Phone: +880-2-8333811-3 Members Only (Mobile no)

Professor Dr. Mirza Mohammad Hiron

FCPS ( Medicine ), MD ( Chest ), FCCP ( USA ),

FRCP ( Ireland ), FRCP ( Edin ), FRCP ( Glasgow )

Professor & Director, Respiratory Medicine

National Institute of Diseases of the Chest and Hospital (NIDCH)

Chamber: Ibn Sina Diagnostic & Imaging Center

House # 48, Road # 9/A, Dhanmondi, SAtmasjid Road, Dhaka – 1209, Bangladesh

Phone: +880-2-9126625, 9128835-7, Cell: +880 1717351631

Professor Dr. AKM Mosharraf Hossain

MBBS, FCPS, FCCP(USA)

Professor, Respiratory Department

Bangabandhu Sheikh Mujib Medical University

Chamber: LabAid Specialized Hospital

Road # 4, House # 6, Dhanmondi, Bangladesh

Phone: +880-2-9676356, 8610793-8

Dr. Syed Rezaul Huq

MBBS, MCPS ( Medicine ), DTCD ( Chest ),

MD ( Chest ), FCCP ( USA ), Trained in Asthma ( Bangkok )

Assistant Professor, Respiratory Medicine

National Institute of Cardiovascular Diseases (NICVD)

Chamber: Aysha Memorial Specialised Hospital

74 /G/ 75, Peacock Square, New Airport Road, Mohakhali, Dhaka -1215, Bangladesh

Phone: +880-2-9122689, 9122690, 8142370, 8142371chest specialist in dhaka

Professor Dr. Md. Atiqur Rahman

MBBS (Dhaka), DTCD (D.U), MD (Chest)

Professor

Respiratory Medicine

National Institute of Chest Disease Hospital

Chamber: Lab-Aid Gulshan

House # 13/A, Road # 35, Gulshan # 2, Dhaka-1212

Phone: +880-2-8835981-4, 8858943, +880 152463101

Dr. Mohammad Enamul Haque

MBBS, DTCD, FCPS

Associate Professor & Head of Department

Dhaka Medical College Hospital

Chamber: The Medical Centre

House # 84, Road # 7/A, ShaMasjid Road, Dhanmondi, Dhaka

Phone: +880-2- 9118219

Dr. Md. Zakir Hossain Sarker

MBBS, DTCD, MD ( Chest )

Assistant Professor, Respiratory Medicine

National Institute of Cardiovascular Diseases (NICVD)

Chamber: Aysha Memorial Specialised Hospital

74 G/ 75, Peacock Square, New Airport Road, Mohakhali, Dhaka -1215, Bangladesh

Phone: +880-2-9122689, 9122690, 8142370, Mobile – 01919372647

Dr. Kazi Saifuddin Bennoor

MBBS, DTCD

Assistant Professor

National Institute of Disease of Chest & Hospital

Chamber: Medinova Medical Services Ltd.

House # 71/A, Road # 5/A, Dhanmondi R/A, Dhaka.

Phone: +880-2-8620353-6

Dr. S M Abdullah Al Mamun

MBBS, MD (Chest Medicine) FCCP

Consultant

Apollo Hospitals Dhaka

Chamber: Apollo Hospital Dhaka

Plot # 81, Block # E, Basudhara R/A, Dhaka – 1229

Phone: +880-2-8401661,Cell: +880 1841276556, Hotline: 10678

Dr. Chandra Prakash Dokwal

MBBS, MD (Chest Medicine)

Coordinator & Senior Consultant

Apollo Hospitals Dhaka

Chamber: Apollo Hospital Dhaka

Plot # 81, Block # E, Basudhara R/A, Dhaka – 1229

Phone: +880-2-8401661, Cell: +880 1841276556, Hotline: 10678

Dr. Adnan Yusuf Chowdhury

MBBS, MCPS, MD ( Chest Diseases )

Consultant, Visiting

United Hospital Limited

Chamber: United Hospital Limited

Plot # 15, Road # 71, Gulshan – 2, Dhaka – 1212, Bangladesh

Phone: +880-2-8836000, 8836444

Dr. Md. Shafiqur Rahman

MBBS, DTCD, MPH

Consultant

Islami Bank Central Hospital

Chamber: Islami Bank Central Hospital

30, Anjuman-e-Mofidul Islam Road, Kakrail, Dhaka – 1000

Phone: +880-2-9355801-2, 9360331-2

Dr. Abdul Hamid

MBBS, DTCD, MRIT

Consultant

City Hospital Ltd.

Chamber: City Hospital Ltd.

1/8, Block-E, Lalmatia, Sat Masjid Road, Dhaka – 1217

Phone: +880-2-8143312, 8143437, 8143913, 8143166, 9124436

Dr. K.C Ganguly

MBBS, DTCD, MD, FCPS, MCPS ( USA )

Assistant Professor

National Institute of Diseases of the Chest and Hospital (NIDCH)

Popular Diagnostic Centre Ltd – Dhanmondi Branch

House # 5, Road # 2, Dhanmondi, Dhaka

Phone: +880-2-9662741 Members Only (Mobile no)

Dr. Kazi Mostafa Sarwar

MBBS, DTCD ( Dhaka ), DTCE ( Japan )

Assistant Professor

National Institute of Chest Diseases & Hospital

Chamber: Rainbow Heart Consultation Center

House # 75, Satmasjid Road, Sankar, Bus Stand, Dhanmondi, Dhaka – 1209

Phone: +880-2-9115602, 9131207, 8158607

Dr. M. A. Qasem

MBBS, DTCD, DTCT ( Japan ), MRIT ( Japan ), DTCE ( Japan )

Consultant

National TB Control Project

Chamber: Sigma Medical Services

Block – B, 22/12 Khilji Road, Mohammadpur, Dhaka – 1207, Bangladesh

Phone: +880-2-9101641

​Top ENT Specialist in Dhaka,Bangladesh

Prof. Dr. Pran Gopal Datta
MBBS, MCPS, ACORL, PhD

Professor & Vice Chancellor, Dept. of ENT, Bangabandhu Sheikh Mujib Medical University

Chamber-
Green Life Hospital Ltd., 32, Bir Uttam K.M. Shafiullah Sarak, Dhanmondi, Dhaka

Phone: +88029612927, +88029612345, +88029612345, +88029612346, +88029612347, +8801966010138.

Professor Dr. A.F. Mohiuddin Khan

MBBS, DLO, MS ( ENT )

Professor & Head of the Department of ENT

Dhaka Medical College & Hospital, Dhaka

Chamber: Japan Bangladesh Friendship Hospital

Location: 55, Satmasjid Road ( Zigatola Bus Stand ), Dhaka – 1209, Bangladesh

Phone: +880-2-9672277, 9676161, 9664028, 9664029

Professor Dr. Abdullah A. Harron

FRCS ( Glasgow ), FCPS

Professor

United Hospital Limited

Chamber: United Hospital Limited

Location: Plot # 15, Road # 71, Gulshan, Dhaka-1212, Bangladesh

Phone: +880 2 8836000, 8836444

Professor Dr. Abul Hasnat Joarder

MBBS, FCPS

Professor & Chairman

Bangabandhu Sheikh Mujib Medical University

Chamber: Anwer Khan Modern Hospital Ltd.

Location: House # 17, Road # 8, Dhaka – 1205

Phone: +880 2 9670295, 8613883, 8616074

Dr. M A Rouf Sardar

MBBS, FCPS ( ENT ),MS

Associate Professor, Otolaryngology

Bangladesh Medical College & Hospital

Chamber: Samorita Hospital Ltd.

Location: 44/16, Panthapath, Dhaka – 1215, Bangladesh

Phone: +880-2-9131901 ( Chamber )

Dr. Mahmudul Hasan

MBBS, FCPS ( ENT )

Associate Professor, Department of ENT

Shaheed Suhrawardy Medical College (SHSMC)

Chamber: Aysha Memorial Specialised Hospital

Location: 74 G/ 75, Peacock Square, New Airport Road, Mohakhali, Dhaka -1215, Bangladesh.

Phone: +880-2-9122689, 9122690, 8142370, 8142371

Dr. A. F. Mohiuddin Khan

MBBS, DLO(DU), MS (ENT)

Assistant Professor

Organization: Dhaka Medical College & Hospital

Chamber: City Hospital Ltd.

Location: 1/8, Block-E, Lalmatia, Satmosjid Road, Mohammadpur, Dhaka – 1207, Bangladesh

Phone: +880-2-8143312, 8143437, 8143166, 8143167, 9124436

Dr. A.B.M. Khorshed Alam

MBBS, FCPS

Assistant Professor

Dhaka Medical College Hospital

Chamber: Monowara Hospital (Pvt) Ltd

Location: 54, Siddeshwari Road, Dhaka – 1217

Phone: +880 831-8135, 831-9802

Dr. A.K.M.A Sobhan

MBBS, FRSH(London), DLO, MS

Assistant Professor

Bangabandhu Sheikh Mujib Medical University

Chamber: Popular Diagnostic Centre Ltd. – Shyamoli Branch

Location: Hous# (22/7)29, Bir Uttam A.N.M Nuruzzaman Sorak, (Babor road) Block# b, Mohammadpur, Dhaka-1207, Bangladesh

Phone: +880-2- 9111911( Chamber ), Mobile-01552347874, 01717062732, 01819211093

Dr. Arun Dodhu Patole

MBBS, MS, DORL (Mumbai), Fellow A.I.N.OT (Italy)

Consultant

Apollo Hospitals Dhaka

Chamber: Apollo Hospitals Dhaka

Location: Plot # 81, Block # E, Basudhara R/A, Dhaka – 1229

Phone: +880-2-8401661, 8845242, Cell: +880 1841276556, Hotline: 10678

Dr. Hossain Imam Al Hadi

MBBS, FCPS, FRCS (Glasgow), Fellowship Training (UK)

Consultant

Apollo Hospitals Dhaka

Chamber: Location: Plot # 81, Block # E, Basudhara R/A, Dhaka – 1229

Phone: +880-2-8401661, 8845242, Cell: +880 1841276556, Hotline: 10678

Dr. Delowar Hossain

MBBS, FCPS ( ENT )

Assistant Professor

Bangabandhu Sheikh Mujib Medical University

Chamber: Health & Hope Hospital Ltd.

Location: 152/1-H Green Road, Panthopath, Dhaka – 1205, Bangladesh

Phone: +880-2-9145786, 9137076, 01819494530 ( Chamber ), Mobile – 01711400356